নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে ইচ্ছা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এসব ঋণখেলাপিরা বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তারা নতুন করে জমি বাড়ি গাড়ি কিনতে পারবেন না। নতুন ব্যবসাও খুলতে পারবেন না তারা।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভা শেষে এসব তথ্য জানান ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায় দেশের ব্যাংকিং খাতের শ্রেণিকৃত ঋণ হ্রাস এবং করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করার ‘রোডম্যাপ অনুমোদন’ পেয়েছে।
‘রোড ম্যাপে’ বলা হয়, অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০২৩ এর আওতায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে মামলা নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান লিগ্যাল বা আইন বিভাগকে শক্তিশালী করা হবে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাছের বলেন, নতুন পথনকশায় (রোডম্যাপ) ব্যাংক খাতের খেলাপিদের আর ছাড় না দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাছাড়া খেলাপিঋণ অবলোপন ও অবলোপন ঋণ আদায় জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সীমার বেশি ঋণ না দেওয়া, যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ এবং শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা নির্ধারণ করার বিষয়েও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রোড ম্যাপ অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের হার ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপিঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপিঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপিঋণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
খেলাপিঋণ কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরিকল্পনায় বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে কোনো ঋণ একাধারে দুই বছর খেলাপি থাকলে (যা বর্তমানে তিন বছর) সেসব ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে অবলোপন করতে হবে। এ ঋণে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি থাকলে ব্যাংকের কোনো ঝুঁকি তৈরি হবে না। অবলোপন করা ঋণ আদায়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ‘অবলোপন করা ঋণ আদায় ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট গঠন করা হবে। এ ঋণ আদায়ের লক্ষ্য অর্জন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পারফর্মেন্সে যুক্ত করার কথা রোড ম্যাপে বলা হয়েছে।
ঋণ পরিশোধের জন্য দেওয়া বাড়তি মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকের তারল্য সংকট কমবে। আবার ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হবে। ইচ্ছা করে খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি খেলাপিঋণ আদায় করা কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ ভাতা চালুর কথাও বলা হয়। তাছাড়া ঋণের জামানত বাধ্যতামূলকভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দিয়ে মূল্যায়ন করাতে হবে।
ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে ৬টি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ব্যাংকের শেয়ারধারী পরিচালকদের যোগ্যতা ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা সংশোধন করা হবে। ফলাফল হিসেবে ব্যাংকের সামগ্রিক ঋণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী হবে। তাছাড়া রোডম্যাপ অনুযায়ী, ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ, তাদের সম্মানি নির্ধারণ এবং দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এতে স্বতন্ত্র পরিচালক আমানতকারী এবং শেয়ারধারীর স্বার্থ সংরক্ষণ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ব্যাংকের এমডি নিয়োগ ও পুনর্নিয়োগ বাছাই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন পদ্ধতি আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হবে। পারদর্শিতার সূচকের ভিত্তিতে কাজের মূল্যায়ন পাবেন এমডিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, একজন গ্রাহক এখন যে পরিমাণ ঋণ নিতে পারেন তার বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। কয়েকটি দুর্বল ব্যাংককে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা হবে। যেখানে একীভূত হওয়ার তিন বছর পর্যন্ত কোনো কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। এর মাধ্যমে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ শক্তিশালী হবে, মূলধন ঘাটতি দূর হবে এবং খরচ কমে আসবে। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের পদোন্নতিতে মৌলিক প্রশিক্ষণ ও ব্যাংকিং প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাধ্যতামূলক করা হবে।
Posted ১:৫৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy