নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এই বন্দর দেশের অর্থনীতিতে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার অবদান রেখে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে। গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে বড় জাহাজ সরাসরি বিদেশি সমুদ্রবন্দরে যেতে পারবে এবং পণ্য লোড-অফলোড করা আরও সহজ ও সস্তা হবে এবং সময় সাশ্রয় হবে।
শনিবার (১১ নভেম্বর) বিকালে কক্সবাজারের মাতারবাড়ির ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ কৃত্রিম নৌ চলাচল চ্যানেলের গভীর সমুদ্রবন্দর উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠানে গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটান ও ভারতও এই বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এতে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে গভীর সমুদ্রবন্দরকে আরও কার্যকর করতে পারি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সমুদ্র সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ব্লু ইকোনমি নীতি গ্রহণ করেছি এবং আমরা নীতিটিকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে সমুদ্র আইন প্রণয়ন করেন এবং জাতিসংঘ প্রণয়ন করে ১৯৮২ সালে। সরকার সেই আইনের ভিত্তিতে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বিশাল সামুদ্রিক এলাকা সফলভাবে অর্জন করেছে।
আওয়ামী লীগ ছাড়া আগের কোনও সরকার এ বিষয়ে কিছুই করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সহযোগিতার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়নকাঠামো ও সেখানে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা হবে। এলাকাটি জাতীয় বাণিজ্য ও ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করবে। সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনার জন্য নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করবে।
একসময় এলাকাটিকে শুধু লবণ আহরণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল কিন্তু এখন এলাকাটির উন্নয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত এবং এর নাগরিকরা এখন সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, সেই গতি বজায় রেখে বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা নারী ও শিশুদের ওপর অমানবিক নিপীড়নের অবসানের পাশাপাশি জনগণের শান্তিতে বসবাস নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের কাছে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। সংঘাতে না জড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই বৈশ্বিক শান্তি বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্যরাও একই কাজ করবে।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (সিপিএ) রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মাদ সোহাইলের স্বাগত বক্তৃতা করেন।
উল্লেখ্য, ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জেটি, ৩০০ মিটার দীর্ঘ বহুমুখী জেটি নির্মাণসহ ১৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফ্ট (জাহাজের পানির নিচের অংশ) এবং কন্টেইনার ইয়ার্ডসহ বন্দরের বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে শনিবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে।
এই উন্নয়নকাজ শেষ হলে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ সরাসরি জেটিতে প্রবেশ করতে সক্ষম করবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিপিজিসিবিএল ইতোমধ্যে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ হিসাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দুটি জেটি নির্মাণ করেছে এবং এই চ্যানেলের মাধ্যমে ১২০টি জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ দেশের প্রথম এবং একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার প্রজেক্টের অধীনে তৈরি হওয়ার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর চ্যানেলটির দায়িত্ব সিপিএকে হস্তান্তর করে।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলার এখান থেকে যোগ হবে এবং সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের খরচ ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমবে। বন্দরটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি ভিত্তিপ্রস্তর হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করবে।
বন্দরটি বঙ্গোপসাগরের তীরে ১ হাজার ৩১ একর জায়গার ওপর নির্মিত হচ্ছে, যাতে ৮ হাজার ২০০ টিইইউ ধারণক্ষমতার কন্টেইনার বহনকারী জাহাজ নোঙর করতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্য শিপমেন্ট পাঠাতে ৪৫ দিন সময় লাগে, বন্দরটি চালুর পরে গন্তব্যে পৌঁছাতে মাত্র ২৩ দিন লাগবে।
দেশের প্রথম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
এর আগে শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করেছেন, যা রেল যোগাযোগের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে, যা দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য, পর্যটন, শিল্প ব্যবসা, ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদানে নতুন আশার সূচনা করেছে।
Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy