নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের যাত্রাকে মসৃণ করতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, আপনারা আসুন, বিনিয়োগ করুন, বাংলাদেশ সবসময় প্রস্তুত আপনাদের আগমনের জন্য। বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করেই বিনিয়োগ করুন।
শনিবার (১১ মার্চ) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই সম্মেলন হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহযোগিতায় (বিডা)
এফবিসিসিআই এই সম্মেলনের আয়োজন করছে। সরকারপ্রধান বলেন, সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আমরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। সমৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে হবে যেখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
আমাদের প্রতিজ্ঞা নিতে হবে যে আমরা কোনমতেই ব্যর্থ হবো না। যে কোনও ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই সফল হবো প্রতিবন্ধকতার উত্তরণ ঘটাতে। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী একটি দেশ, আমরা বিজয়ী জাতি। বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমাদের দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তাই সবার সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে দরকার, বলেন তিনি।
বাংলাদেশ এখন ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য ৫ বছর প্রস্তুতিমূলক সময় পার করছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ আমাদের দেশের জন্য একই সঙ্গে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করবে আবার অনেকগুলো চ্যালেঞ্জও আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি- আমরা কঠোর বাণিজ্য প্রতিযোগিতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতাও অর্জন করবো। আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব সুযোগ কাজে লাগাতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছি।
সরকারপ্রধান বলেন, এখানে কোনো হতাশার কথা শুনতে চাই না। এখন থেকে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। যেসব চ্যালেঞ্জ সামনে আছে, সেগুলো আমরা মোকাবেলা করবো।
উত্তরণ-পরবর্তী পরিবেশে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় তার সরকার ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলেও কথা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর অভিঘাত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বাণিজ্যিক অবরোধ বা পাল্টা অবরোধে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নকামী দেশেগুলোকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন করেছে। শুধু আমাদের মতো দেশ না, উন্নত দেশগুলোও কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিসহ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের নেতাদের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে জিনিসপত্রের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার পন্থা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে নিজেরা নিজেদের বাজার হারাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও আমাদের অর্থনীতি থামেনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উন্নয়নের রোল মডেল।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সেটি আরও সংস্কার ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সরিয়ে দেওয়া হবে। (যে বিষয়ে) সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে।
তিনিবলেন, করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও আমাদের অর্থনীতি থামেনি। ২০০৬ এর ৬০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা নিয়ে এগোনোর অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কোনো হতাশা শুনতে চাই না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় বাংলাদেশ বন্যা-খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত পেত। এখন কিন্তু সে অবস্থা নেই। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। গত ১৪ বছরে আমরা বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি করোনাকালেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করেছি পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে করে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজেদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসা, ভুটানের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী কর্ম দর্জি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) উপ-মহাপরিচালক জিয়াংচেন জং। এতে অংশ নেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।
Posted ১:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy