সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দখল-চাঁদাবাজ চক্রের কয়লা আয়ান শর্মা : ভোক্তভোগীদের দেখান পত্রিকার ভয়

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

দখল-চাঁদাবাজ চক্রের কয়লা আয়ান শর্মা : ভোক্তভোগীদের দেখান পত্রিকার ভয়

মোটরসাইকেল আটকে রেখে এক লাখ ২০ হাজার টাকা আদায়ের সময় ইমতিয়াজ সিয়াম ও তার সহযোগী জয়নালকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইমতিয়াজ নগরীর পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ হামজা খাঁ লেনের আক্তার হোসেনের ছেলে। আবাসিক এলাকার একটি সড়ক নির্মাণে বাধা দেন আক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী রিনা আক্তার। এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত এই দম্পতির পক্ষ হয়ে পুরো এলাকার মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সাংবাদিক নামধারী আয়ান শর্মা।

জানা গেছে, মামলার রায়, ভূমি কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও রেকর্ডে সড়ক থাকার পরও সেটি আক্তার-রিনা দম্পতি তাদের জায়গা দাবি করে। আর তাদের দাবির ওপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম প্রতিদিন নিউজ প্রকাশ করে। এর প্রতিবাদে এলাকার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রতারক আয়ান শর্মার শাস্তি দাবি করেন। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন হযরত শাহ আমানত আবাসিক এলাকার সভাপতি শাহেদ আলী রানা। একই অভিযোগ সিএমপির উপকমিশনার (উত্তর) বরাবর দেওয়া হয়েছে; সেটির তদন্ত করছে পাঁচলাইশ থানা।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দেওয়া অভিযোগে আয়ান শর্মাকে ৪ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়। অন্য অভিযুক্তরা হলেন আক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী রিনা আক্তার এবং নুরুল বশর বিপলু। বিপলু মোটরসাইকেল আটকের ঘটনায় গ্রেপ্তার আক্তারের ছেলের সহযোগী হিসেবে মামলার আসামি। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার।

হযরত শাহ আমানত আবাসিক এলাকার সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা আবাসিকের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছি। রাস্তার নিচ দিয়ে পানি ও গ্যাসের লাইন এবং ওপরে বিদ্যুতের লাইন আছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সড়কের উন্নয়ন করতে গেলে রাস্তার সামনের কিছু অংশ দাবি করে আক্তার ও রিনা। তারা সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা দেন। বিষয়টি আদালত ও ভূমি অফিসে নিষ্পত্তির পরও বাধা দিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব ভূমিদস্যুর পক্ষ হয়ে উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়ান চট্টগ্রাম প্রতিদিনের আয়ান শর্মা। তার বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন মানববন্ধন করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন ঘটনার পর চট্টগ্রাম প্রতিদিনে নিউজ করে ফয়সালার প্রস্তাব দেন আয়ান শর্মা।

ওই আবাসিক এলাকার প্লট মালিকরা জানান, আক্তার ও রিনা লোকজনের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন যে সড়কের জায়গাটি প্লট বানিয়ে মালিকদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আদায় করবেন। সেই টাকার বড় একটি অংশ আয়ান শর্মাকে দেওয়ার মৌখিক চুক্তি হয়েছে। ভূমিদস্যু আক্তারের বিভিন্ন অপকর্ম ঢাকতে আয়ান শর্মা তার পত্রিকার প্রভাব খাটিয়ে থানায় তদবির করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, আক্তার-রিনা দম্পতি রাস্তার যে অংশকে তাদের অংশ দাবি করছেন, সেটিকে দুটি প্লট দেখিয়ে বিক্রি করেছেন। ওই দুটি প্লট বিক্রি দলিলের কপি আমাদের সময়ের হাতে রয়েছে। মূলত আয়ান শর্মার ভয় দেখিয়ে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেই চলাচলের রাস্তা নিজেদের বলে দাবি করছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের আয়ান শর্মা একই রাস্তা নিয়ে একাধিক নিউজ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি হাস্যকর মন্তব্য করে একজন প্লট মালিক বলেন, যে বিষয়ের কোনো ভিত্তি নেই, আদালতের রায় ও ভূমি অফিসের নথিকে অস্বীকার করে কীভাবে নিউজ করে বুঝি না। ভূমিদস্যুদের পক্ষ হয়ে পত্রিকায় নিউজ ছাপিয়ে হেনস্তা করার ভয়ভীতি দেখায়। এতে ওই সাংবাদিকের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে সম্পূর্ণ পরিষ্কার।

হযরত শাহ আমানত আবাসিক এলাকার সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসা চাঁদা না পেয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, উচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা অমান্য করে রাতের আঁধারে জমি ভরাট করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অন্তত ১৫ বছর ধরে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ ছাড়া যে মামলার স্থিতাবস্থার কথা বলা হয়েছে, তার বাদী আয়ান গং নয়। চট্টগ্রাম তৃতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ওই মামলার বাদী বাবুল কুমার শীলের পক্ষে নিযুক্ত আমমোক্তার সামশুল হুদা এবং বিবাদী সাধন শীল।

আবাসিকের প্লট মালিক ও বাক প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধা মো. সুলতান আহমদ এ অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগকারীদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে ২০১৮ সালে পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম। আক্তার হোসেন আবাসিকের লোকজনকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। ফলে আবাসিকের হাজারো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে আয়ান শর্মা বলেন, আমি কারও পক্ষ নিয়ে নিউজ করে কারও কাছে চাঁদা দাবি করিনি কখনো। আর আমার বিরুদ্ধে কমিশনারের কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ বা মামলা হলে আমি তো জানতাম। এগুলো সব বানোয়াট কথা। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এগুলোর বিষয়ে কিছুই জানি না। আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com