সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৭ ব্যাংককে ডেফারেল সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট

১৭ ব্যাংককে ডেফারেল সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ঋণখেলাপিতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ঘাটতি হলেও ১৭ ব্যাংককে ৫০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোকে বিপৎকালীন প্রভিশন ঘাটতি পূরণ করার লক্ষ্যে ডেফারেল (বকেয়া) সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যাংকভেদে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে এক থেকে নয় বছর পর্যন্ত। এ বকেয়া প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী কিস্তিতে পরিশোধ করবে ব্যাংকগুলো।

বিশেষ এ সুবিধা পাওয়ার শীর্ষে রয়েছে ন্যাশনাল, জনতা, এবি ও রূপালী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, ধারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে রক্ষার চেষ্টা করা হলেও এটা গ্রাহকের মধ্যে ভীতি ছড়াতে পারে।

ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের মানভেদে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যেসব ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারে না, তাদের ব্যাংকের মূলধন থেকে সেই ঘাটতি সমন্বয় করা হয়। ফলে ব্যাংকের মূলধন কমে যায়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সেই ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এই দুই সমস্যা সমাধানে ডেফারেল নামক বিপৎকালীন সুবিধা পায় ব্যাংক। এতে কাগজে-কলমে সমাধান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকের সমস্যা থেকেই যায়।

ডেফারেল সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়েছে ১০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। ব্যাংক দুটোকে পরবর্তী ৯ বছরের মধ্যে প্রভিশন সমন্বয় করার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবি ব্যাংক ডেফারেল সুবিধা নিয়েছে ৬ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা, যা ২০২৯ সাল পর্যন্ত কিস্তিতে সমন্বয় করা যাবে। রূপালী ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতির বিপরীতে ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা পায়।

ব্যাংকগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টা আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি। সাধারণ আমানতকারীরা যদি না জানে তাঁরা যে ব্যাংকে টাকা রাখছেন তার ভিত্তি দুর্বল, তাহলে তাঁদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। এ জন্য লাগাতার ডেফারেল সুবিধা দেওয়া মোটেও ব্যাংকের জন্য ভালো নয়। এতে ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণে আগ্রহ পায়।’

অগ্রণী ব্যাংক ৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা নিয়েছে চার বছরের জন্য। বেসিক ব্যাংক ৪ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছে, যা ৯ বছরের জন্য সমন্বয়ের সুযোগ থাকছে। সোনালী ব্যাংক চার বছরে ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা পায়। ওয়ান ব্যাংক পাঁচ বছরের জন্য ১ হাজার ২৪ কোটি টাকার সুবিধা পায়।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম বলেন, ‘নিয়ম মেনেই ডিফারেল সুবিধা দেয়। এতে কোনো ব্যাংক সমস্যাগ্রস্ত হলে তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পায়। তবে প্রভিশন সমন্বয়ে ব্যাংকগুলোর চেষ্টা থাকা দরকার।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এনসিসি ব্যাংককে ৬৮৫ কোটি টাকা এবং ঢাকা ব্যাংককে ৪৯৮ কোটি টাকার সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৪২৮ কোটি, আইএফআইসি ৪২০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৯৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৭০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১২১ কোটি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংককে ৩৭ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দেওয়া হয়। এই ব্যাংকগুলোকে ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগপর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা ব্যাংকের ডেফারেল সুবিধা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান ডেফারেল সুবিধার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ব্যাংকের প্রয়োজনে ডেফারেল সুবিধা নেয় ব্যাংকটি। তবে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে কম ডেফারেল সুবিধা পায় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক।’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:০৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৮ আগস্ট ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com