নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। ভারত থেকে রুপিতে কেনা ৩০টি লরির (ট্রাক) প্রথম চালান মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে। এলসি খোলার ১৫ দিনের মাথায় এসব পণ্য দেশে এলো।
বেনাপোল কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে এক কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৬০ রুপি মূল্যের ৩০টি লরি নিয়ে চারটি ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার নিতা কোম্পানি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান টাটা মোটরসের কাছ থেকে এসব লরি কিনেছে। আমদানির পর পণ্যের চালানটি বেনাপোল বন্দরের ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে।। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, ‘ডলারের পরিবর্তে রুপিতে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি শুরু হয়েছে। আমদানির প্রথম চালান মঙ্গলবার বেনাপোল বন্দরে পৌঁছায়। রুপিতে পণ্য আমদানি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কমবে।’
আমদানিকারক নিতা কোম্পানি লিমিটেডের যশোর এরিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রুপিতে এলসি খোলার ১৫ দিনের মাথায় প্রথম পণ্যের চালান দেশে এসেছে।’
এর আগে গত ১১ জুলাই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতীয় হাইকমিশন দুই দেশের বাণিজ্যে রুপি ব্যবহারের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানি এবং ভারত থেকে আমদানি-উভয় ক্ষেত্রে এখন থেকে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি রুপি ব্যবহার করা যাবে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহমেদ বলেন, ‘রুপির মাধ্যমে ভারত থেকে কেনা প্রথম পণ্যের চালান আমদানি হয়েছে। রুপিতে পণ্য আমদানি শুরু হওয়ায় ডলারের ওপর চাপ কমবে।’
বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হওয়ায় দুই দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়বে। রুপিতে বাণিজ্য ইতিবাচক। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যাবে। এটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে ডলারের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চলে আসছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলারের মতো বাণিজ্য হয়। তবে এর মধ্যে ভারত থেকে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয় আসে। অর্থাৎ দুই বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হতে পারে রুপিতে। তবে ভারতে রফতানি বাড়াতে পারলে সে হিসাব পালটে যাবে। ডলারের নির্ভরতা কমবে।’
পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘আগে শুধুমাত্র ডলারে বাংলাদেশে পণ্য পাঠানো হতো। এখন থেকে রুপিতে পণ্য পাঠানো হচ্ছে। আজ প্রথম চালানে এক কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৬০ রুপির পণ্য বাংলাদেশে গেছে।’
বেনাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টম বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। আর্থিকভাবে উপকৃত হয় ভারত। রুপিতে বাণিজ্য চালু হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধা হয়েছে।’
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সামছুর রহমান বলেন, ‘চলমান ডলার সংকটের সময়ে বাণিজ্য সহজ করতে রুপিতে আমদানি সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এতে আমদানি-রফতানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের রাজস্ব আয় বাড়বে। সেইসঙ্গে শ্রমিকদের বসে থাকতে হবে না।’
Posted ১:৩৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ জুলাই ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy