নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
বিশ্বজুড়ে মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২১ সালে দিনে ৩০০ কোটি ডলারের লেনদেন হলেও গত বছর সেটি বেড়ে ৩৪৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তাতে ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে মোবাইলে অর্থ লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি ডলারের।
বৈশ্বিক সংস্থা জিএসএমএর বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। স্টেট অব দ্য ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট অন মোবাইল মানি ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বুধবার প্রকাশ করা হয়। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে জিএসএমএ প্রতিবছর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিশ্বজুড়ে মোবাইলে আর্থিক সেবা অথবা এমএফএস ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই খাতে প্রথম ৮০ কোটি গ্রাহক পেতে ১৭ বছর সময় লেগেছিল। তবে পরবর্তী ৮০ কোটি গ্রাহক হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরে। ২০২১ সালে সারা বিশ্বে এমএফএসের গ্রাহক ছিল ১৪০ কোটি। এক বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে তা ১৪ শতাংশ বেড়ে ১৬০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৩১৫টি এমএফএস প্রতিষ্ঠান চালু আছে, যার মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পিটুপি) অর্থ স্থানান্তর বা মানি ট্রান্সফার এবং ক্যাশ ইন বা ক্যাশ আউট লেনদেন এখনো সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবা। এমএফএস ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এই গতি অন্য যেকোনো সেবার চেয়ে দ্রুত।
জিএসএমএর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক এলাকায় সেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত ও কম খরচে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে আরও কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, এখনো ১৪০ কোটি মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে রয়েছে।
মহামারি করোনার সময় এমএফএস খাতের অগ্রযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, শুধু মহামারির সময় এমএফএস খাতে ৪০ কোটি নতুন হিসাব যুক্ত হয়েছে। এই অগ্রগতির নেপথ্যে রয়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর লাখ লাখ মানুষকে ডিজিটাল আর্থিক সেবার সুযোগ করে দিতে প্রযুক্তির ভূমিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এমএফএস ব্যবহারের কারণে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা প্রবাহ ২৮ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। মহামারির সময় প্রবাসীদের অনেকে সেবাটির মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের কাছে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা প্রবাহ গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। দ্রুতগতি, নিরাপত্তা ও কম খরচের কারণেই মূলত এমএফএস বেছে নিয়েছেন গ্রাহকেরা।
জিএসএমএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারীদের আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাঁদের মধ্যে পরিবর্তন আনা ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও অবদান রাখতে পারে।
বাংলাদেশেও গত এক দশকে এমএফএস জনপ্রিয় হয়েছে। গত জানুয়ারিতে এমএফএসে সব মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ১৩৭। তবে সক্রিয় গ্রাহক ছয় কোটির কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারিতে এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এ খাতে লেনদেন ছিল ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। ফলে দিনে দিনে এমএফএসের ব্যবহার বাড়ছে, যা আনুষ্ঠানিক লেনদেনের আকারকে আরও বড় করছে। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে এমএফএসে লেনদেন প্রথমবারের মতো ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।
Posted ২:২৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy