নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলসহ হিসাব কর্মকর্তা ও আইন কর্মকর্তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে তাদেরকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন কোম্পানিটির ভাইস-চেয়ারম্যান, উদ্যোক্তা ও স্বতন্ত্রসহ মোট ১২ পরিচালক। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যানের কাছে করা এক যৌথ আবেদনে কোম্পানিটির ‘গ্রাহক, কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে’ওই কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানান তারা।
আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া ওই আবেদনে কোম্পানিটির পরিচালকরা অভিযোগ করে বলেছেন, মুখ্য নির্বাহীসহ ওই তিন কর্মকর্তা কোম্পানির আয় ব্যয় সম্পর্কে তাদেরকে কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। অপরদিকে, তথ্য গোপন করে হোমল্যান্ড লাইফের অর্থ আত্মসাত করছেন বলে তারা সন্দেহ করছেন। এমনকি নিয়মিত দুর্নীতির প্রমাণও মুছে ফেলছেন। ওই কর্মকর্তারা বহাল থাকায় এবং তাদের অসহযোগিতার কারণে কোনো তদন্ত বা নিরীক্ষাও করা সম্ভব হচ্ছে না বলে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনে উল্লেখ করেন হোমল্যান্ড পরিচালকরা। এই আবেদন ছাড়াও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করছে আইডিআরএ।
আবেদনকারী পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, হোমল্যান্ড লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক কামাল মিয়া, আব্দুর রব, ফয়জুল হক, জামাল উদ্দিন, আব্দুল হাই , আব্দুল আহাদ, শামীম আহমদ, এমাদুল ইসলাম, শওকতুর রহমান, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী। আবেদনের অনুলিপি অর্থমন্ত্রী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবরও পাঠানো হয়েছে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে করা ওই আবেদনে হোমল্যান্ড পরিচালকরা মুখ্য নির্বাহীসহ হোমল্যান্ডের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, “ (১)অফিস নির্বাহী কর্মকর্তা (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকর্তা) সকল ধরনের গ্রাহক লেনদেনে সম্পৃক্ত। আমরা এ কাজে সরাসরি যুক্ত নই। আমাদেরকে এ বিষয় না জানালে আমরা বোর্ডে উপস্থাপন করে জানানোর চাপ দেই। এই আক্রোশে তারা আমাদের নামে মাগুরার আদালতে মিথ্যা মামলা করিয়ে আমাদের অসম্মানিত করেছে। (২) দায়েরকৃত মামলার বিষয়ে আদালতে যোগাযোগ করে জানতে পারি আমাদের নামে সমন এসেছিল। আমাদের সন্দেহ হয় যে, তারা ওই সমন আমাদের না দেখানোয় এবং সমনের বিষয় গোপন করেছিল বলেই আদালত ওয়ারেন্ট দিলে আমাদের (পরিচালকদের) কারাগারে যেতে হয়েছিল।
(৩)যেদিন পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে সেদিন পুলিশ আমাদের মৌখিকভাবে বলেছে যে, কখন পুলিশ আসলে আমাদের গ্রেপ্তার করা যাবে সে বিষয়ে এই নির্বাহীগন গোপনে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেছিল। (৪) মামলা বিষয়ক সকল তথ্য তারা গোপন করায় পরিচালকবৃন্দের নিকট অবিশ্বাস গভীর হয়েছে। এর ফলে কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হবেন মর্মে আশংকা করছি। ৫। ভবিষ্যতে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় ব্যক্তি নিরাপত্তায় অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।”
আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে হোমল্যান্ড লাইফের ১২ পরিচালকের করা ওই আবেদনে আরো বলা হয়, “কোম্পানীর বেশিরভাগ পরিচালক সন্দেহ করেন যে, এই নির্বাহীগণ তথ্য গোপন করে কোম্পানির বহু লক্ষ কোটি টাকা লুটপাট করিতেছে। তারা বহাল থাকায় কোন তদন্ত বা নীরিক্ষা দ্বারা তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। তারা নিয়মিত দুর্নীতির প্রমাণ মুছে ফেলছে। তাদের অসহযোগিতার কারণে এই কোম্পানিতে কোন নিরপেক্ষ তদন্ত করাও সম্ভব নয়। তারা প্রায়ই দুর্নীতির প্রমাণ গায়েব করিতেছে এবং আমরা আয়-ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন কিছুই তারা জানায় না। তারা কয়েক পরিচালকের আশকারায় বেশি রকম দুঃসাহসী হয়ে আরো বড় রকমের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তারা গ্রাহকের টাকা গ্রহণ করে এবং দাবি পরিশোধ করে। কিন্তু কার কাছ থেকে কত টাকা নেয় এবং কাকে কত টাকা দাবি পরিশোধ করতে হবে সে সকল সিদ্ধান্ত তারাই নেয় এবং এমনকি দাবি পরিশোধে পরিচালকদের বা বোর্ডের কোন অনুমতিও নেয় না। প্রকৃতপক্ষে তারা দাবি পরিশোধ না করার অপরাধে দায়ি হওয়া সত্ত্বেও তারা আসামী হয় না; অথচ নিরীহ পরিচালকেরা মামলাভুক্ত হচ্ছেন। তারা কারসাজি করে কোম্পানীর নিরপরাধ পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য নীরিহ গ্রাহকদের উৎসাহিত করে পরিচালকদের শায়েস্তা করার পথ নিয়েছে। এমন অমানুষ নির্বাহীগণের এই কোম্পানীতে থাকার প্রয়োজনীয়তা নাই।”
হোমল্যান্ড পরিচালকদের আবেদনে বলা হয়, “গ্রাহক-লেনদেনে সম্পৃক্ত নির্বাহী কর্মকর্তাদের মামলায় জড়িত না হওয়া বা তাদের জবাবদিহিতা ব্যতীত সরাসরি কোম্পানির পরিচালকদের বিরুদ্ধ মামলায় জড়িতকরণ বিষয় এবং তাদের দ্বারা মামলাকারির কাছে কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তথ্য-বিনিময়ের কারণে আমাদের মনে নিরাপত্তাহীনতার চূড়ান্ত আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই কোম্পানীতে থাকিলে আরো অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। উপরোক্ত ১০ টি কারণে এই মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকতার বিরুদ্ধে যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে সে কারণে তাদের এই কোম্পানীতে থাকা গ্রাহক ও পরিচালকদের জন্য আর ভাল হবে না। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার শেল্টারের কারণে দুর্নীতিবাজ আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে না।মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হলে কোম্পানীর দুর্নীতির শিকড় আইন কর্মকর্তা ও হিসাব কর্মকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনার দ্বারা আদেশ হইলে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিচালক বোর্ড সভায় তাদের অপসারণে রেজুলেশন নেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। এমতাবস্থায়, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকের স্বার্থে বর্ণিত দুর্নীতিবাজ ও নিরীহ পরিচালকবৃন্দকে মামলাভুক্ত করার ক্লিকবাজিতে জড়িত মর্মে সন্দেহযুক্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণের জন্য বিনীত আবেদন করছি।”
মুখ্য নির্বাহীসহ তিন কর্মকর্তাকে অপসারণের আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. হান্নান মিয়া বলেন, ‘শুনেছি এসব বিষয় নিয়ে আইডিআরএ তদন্ত কমিটি করেছে। হোমল্যান্ড পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকেও তিন পরিচালকের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন কি না কমিটি সে বিষয়ে তদন্ত করবে। তবে সহযোগিতার অভাবে তারা এখনো তদন্ত করতে পারছেন না।’ পরিচালকদের ঐক্য না থাকায় নেপথ্যের কারিগররা এসব কলকাঠি নাড়ছে। তাদেরকে আপনারাও চিনেন আমরাও চিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
হোমল্যান্ডের ১২ পরিচালকের আবেদনের বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, কোম্পানিটির বিষয়ে আইডিআরএ তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্ত চলছে।
Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy