নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপনে একের পর এক নতুন রেকর্ড করছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহেই বিশ্বের ১ নম্বর পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেডের চতুর্থ ইউনিট। নতুন খবর হচ্ছে, চট্টগ্রামের প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের এনএইচটি ফ্যাশনস উন্নীত হয়েছে লিড প্লাটিনামে। এত দিন এই পোশাক কারখানাটি ছিল লিড গোল্ড সনদপ্রাপ্ত পরিবেশবান্ধব কারখানা।
এনএইচটি ফ্যাশন লিড প্লাটিনামে উন্নীত হওয়ার সনদ পেয়েছে গত বুধবার। আজ শুক্রবার তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বি
জিএমইএ বিষয়টি জানিয়েছে। তারা বলছে, পরিবেশবান্ধব কারখানার এমন মানোন্নয়ন এটিই প্রথম।
২০১৭ সালে এনএইচটি ফ্যাশনস ১১০ নম্বরের মধ্যে ৬৪ নম্বর পেয়ে লিড গোল্ড সনদ পেয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পায়। আর এখন কারখানাটি মানোন্নয়ন করে ১১০ নম্বরের মধ্যে ৮৪ পেয়ে লিড প্লাটিনাম সনদ পেল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন নতুন পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কারখানার রিসার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। এনএইচটি ফ্যাশনস তারই প্রথম উদাহরণ। তার মানে আমরা দ্বিতীয় পরিবেশবান্ধব কারখানার দ্বিতীয় পর্যায়ে পদযাত্রাও শুরু করলাম। এর মাধ্যমে আমাদের উদ্যোক্তারা দেখিয়ে দিলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানার উন্নয়নেও কাজ করছেন।’
সারা বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে একটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। প্রতিষ্ঠানটি ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। সনদটি পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণের পরে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও ইউএসজিবিসির আবেদন করা যায়।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীন কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। গত বছরের নভেম্বরে লিড সনদ পাওয়া বাণিজ্যিক স্থাপনার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।
বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলোর প্রায় সব কটিই ইউএসজিবিসির সনদ নিয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের ২১১টি স্থাপনা লিড সনদ পেয়েছে। এর মধ্যে ১৮৯টি পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা। এসব কারখানার মধ্যে লিড প্লাটিনাম ৬৬টি ও লিড গোল্ড ১০৯ টি।
ইউএসজিবিসির সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব কারখানার ৮টিই বাংলাদেশের। বাকি দুটির একটি ইন্দোনেশিয়ার ও একটি শ্রীলঙ্কার। ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের সেরা পরিবেশবান্ধব কারখানাটি ছিল ইন্দোনেশিয়ায়। কারখানাটি ১১০ নম্বরের মধ্যে ১০১ পেয়েছিল। এখন শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে গ্রিন টেক্সটাইল। এ ছাড়া শীর্ষ ১০-এর তালিকায় থাকা বাংলাদেশি বাকি ৭টি কারখানার মধ্যে রয়েছে-রেমি হোল্ডিংস, ফতুল্লা অ্যাপারেলস, তারাসিমা অ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস, সিল্কেন সুইং, মিথেলা টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ। এ তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশি কারখানাটির নাম প্রকাশ করা হয়নি। শুধু দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে দেশে পরিবেশবান্ধব কারখানার যাত্রা শুরু হয়। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও প্রথম এই মর্যাদা লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব পোশাক ও বস্ত্রকল রয়েছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক পণ্য খাতেও আছে পরিবেশবান্ধব কারখানা। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, তবে সংখ্যায় কম।
Posted ১:২৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy