নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রবাহ কমেছে। আগের তুলনায় ডলারের দাম বৃদ্ধি ও প্রণোদনা ঘোষণা করেও কমছে না হুন্ডির দৌরাত্ব। সদ্য সমাপ্ত আগস্ট মাসে মোট ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশীরা। দেশিয় মুদ্রায় (এক ডলার সমান ১০৯ টাকা ধরে) এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
যদিও গত জুন মাসে দেশে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল। মাসিক ভিত্তিতে তিন বছরের মধ্যে যা ছিল সবচেয়ে বেশি। ওই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা প্রায় ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। পরের মাস জুলাইয়ে কমে যায় রেমিট্যান্সের সেই প্রবাহ। কারণ জুলাই শেষে দেশে আসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা ১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, আগস্ট মাসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা ১৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। যা গত জুন ও জুলাই মাসের চেয়ে অনেক কম হবে। গত জুলাইয়ে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং জুনে এসেছিল রেকর্ড ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স।
আলোচিত সময়ে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৮ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৩৭ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৩ লাখ ১০ হাজার ডলার।
তবে আলোচিত সময়ে ৭ ব্যাংকের মাধ্যমে কোন রেমিট্যান্স আসেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়ীত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।
এর আগে সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারের (১.৯৭ বিলিয়ন ডলার) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দেশীয় মুদ্রায় (এক ডলার সমান ১০৮.৫০ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ২১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকার বেশি। এটি আগের মাস জুনের তুলনায় প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে ২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের মাস জুনে রেমিট্যান্সে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
গত জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। একক মাস হিসেবে যেটি ছিল প্রায় তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসা প্রবাসী আয়। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছিল। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে।
সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে দুই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। গত অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার এসেছিল। টানা পাঁচ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে আর যেতে পারেনি। অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে আসে ১৫৪ কোটি ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ১৫৬ কোটি ডলার আসে।
গত মার্চ এসেছিল ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ এবং মে মাসে ১৬৯ কোটি ডলার আসে। সবশেষ ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জুন মাসে আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর সব শেষ মাস সদ্যবিদায়ী আগস্টে এল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
Posted ১:৩৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy