নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
ব্যাংক খাতে চাপে থাকা বা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ দ্রুত বাড়ছে। ২০২২ সাল শেষে খেলাপি হওয়া, পুনঃতপশিল ও অবলোপনের পর অনাদায়ী থাকা এসব ঋণের পরিমাণ বেড়ে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে; যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের ঋণ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে উঠে এসেছে এমন চিত্র।
পুনঃতপশিল, অবলোপনসহ বিভিন্ন কারণে ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে অনাদায়ী সব ঋণখেলাপি হিসেবে দেখানো হয় না। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও খেলাপি, পুনঃতপশিল করা অনাদায়ী এবং অবলোপন থেকে অনাদায়ী ঋণের মোট স্থিতি একসঙ্গে দেখানো হচ্ছিল না। এই তিন ক্যাটাগরির ঋণের মধ্যে পুনঃতপশিল করা ঋণস্থিতি প্রকাশই করত না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু কোন বছর কত পুনঃতপশিল করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হতো। এই তিন ক্যাটাগরির ঋণকে একত্রে চাপে থাকা বা দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ বলা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবলের (আইএমএফ) শর্ত থাকায় এবারের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে এ ধরনের ঋণের সার্বিক তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম একটি শর্ত, এসব ঋণের তথ্যও প্রকাশ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সাল শেষে চাপে থাকা ঋণস্থিতি ছিল তিন লাখ ১৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। এর মানে এক বছরের ব্যবধানে এ ধরনের ঋণ বেড়েছে ৬২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণস্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদনে খেলাপি হিসেবে দেখানো হচ্ছে এমন ঋণের স্থিতি এক লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা; এক বছর আগে যা ছিল এক লাখ ৩ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। অবলোপন করা ঋণস্থিতি এক বছর আগের ৪৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা থেকে সামান্য বেড়ে ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা হয়েছে। আর পুনঃতপশিল করা ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা; এক বছর আগে যা এক লাখ ৬৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত শিথিল করে গত বছর ঋণ পুনঃতপশিলের সব ক্ষমতা ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। এরপর রেকর্ড ঋণ পুনঃতপশিল করেছে ব্যাংকগুলো। ২০২২ সালে পুনঃতপশিল করা হয়েছে ৬৩ হাজার ৭২০ কোটি টাকা; আগের বছর যা মাত্র ২৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা ছিল। এর আগে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতপশিলের বিশেষ সুযোগে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা পুনঃতপশিল করা হয়। এভাবে বছরে বছরে পুনঃতপশিল হলেও আদায় হচ্ছে কম।
ব্যাংকাররা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ পুনঃতপশিলের সুযোগ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কখনও রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বলে, আবার কখনও বৈশ্বিক খারাপ পরিস্থিতি দেখিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল বা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর ২০২০ সালে কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছেন ঋণগ্রহীতারা। ২০২১ সালে যে পরিমাণ কিস্তি পরিশোধ করার কথা, তার ১৫ শতাংশ দিলেই খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালে মোট ঋণের অর্ধেক দিলে নিয়মিত দেখানো গেছে। চলতি বছর আংশিক কিস্তি দিলে খেলাপিমুক্ত থাকবে। ঋণ আদায়ে কঠোরতার পরিবর্তে এভাবে সুযোগের ফলে একটি শ্রেণি ইচ্ছা করে ঋণ পরিশোধ করছে না।
Posted ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | munny akter