নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
সদস্যভুক্ত সকল ট্রেক বা ব্রোকারেজ হাউজের সমন্বিত গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ (ডিএসই)। একই সঙ্গে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের জুন মাস পর্যন্ত প্রদেয় স্থিতির তথ্যও জানতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি সকল ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবং বন্ধ হয়েছে। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সকল ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি প্রান্তিকের (তিন মাস অন্তর) সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের তথ্য সব ব্রোকারেজ হাউজের কাছে চেয়েছে ডিএসই।
সমন্বিত গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএসইসির ২০২২ সালের ২ অক্টোবর জারি করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সকল ব্রোকারেজ হাউজকে চলতি বছরের ১০ জুলাইয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে বা ফরম্যাটে ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে সমন্বিত গ্রাহক ব্যাংক হিসাবের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত তথ্য এমএস এক্সেল এবং পিডিএফ উভয় ফরম্যাটে ই-মেইলের মাধ্যমে সফট কপি পাঠানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউজকে পরবর্তী প্রতি ত্রৈমাসিক শেষে উক্ত তথ্য দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোর সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের মাসিক পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর বিধি ৬(১) ও ৬(৫) এবং বিএসইসির ২০২১ সালের ২০ জুন জারি করা নির্দেশনা দেখার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, আপনাদেরকে ২০২৩ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত সময়ের ওপর ভিত্তি করে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের প্রয়োজনীয় সহায়ক নথিসহ গ্রাহকদের প্রদেয় স্থিতি সম্পর্কিত তথ্য বা নথি প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে সিসিএ মডিউল ব্যবহার করে মেকার ও চেকার আইডি ব্যবহার করে এসব তথ্য প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
গত কয়েক বছরে তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে। এর পর ডিএসই ও সিএসই‘র সব ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তসাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এর পর থেকে ১০২টি প্রতিষ্ঠান ৫৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সমন্বয় করেছে। বাকি ৬টি ব্রোকারেজ হাউজ ৪৯ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি।
এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের ঘাটতি রয়েছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ঘাটতি আছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘাটতি আছে পিএফআই সিকিউরিটিজের, এশিয়া সিকিউরিটিজের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, লতিফ সিকিউরিটিজের ৩২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এবং মডার্ন সিকিউরিটিজের ৫ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘাটতি আছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বিএসইসি গত বছর ২২ মার্চ সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আছে—স্টক এক্সচেঞ্জকে লিমিটি সুবিধা স্থগিত করা হবে, যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবে আইপিও কোটা সুবিধা বাতিল হবে, স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ স্থগিত থাকবে এবং ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন এবং নতুন শাখা ও বুথ খোলা বন্ধ রাখা হবে। তার আগে ২১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের আমানত অর্থাৎ শেয়ার ও অর্থ সরিয়ে নেওয়া তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ ২৫টি ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন সনদ নবায়ন বন্ধসহ নানা সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়।
Posted ৩:৪১ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy