সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিডিবিএল’র সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

সিডিবিএল’র সার্বিক কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির কমিটি গঠন

পুঁজিবাজারের তথ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তথ্য পাচার করাসহ আরও বেশকিছু অভিযোগ উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির ইন্সপেকশন, ইনকোয়ারি অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত তদন্তের আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মজুমদার, উপ-পরিচালক মো. বনি ইয়ামিন খান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন, সহকারী পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসেন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপক মো. দীন ইসলাম মোল্লা।

বিএসইসির জারি করা তদন্তের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পর্যবেক্ষণ করেছে যে, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কর্মকর্তাদের সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ে জড়িত থাকা, তথ্য পাচার করা এবং জাল একাডেমিক সার্টিফিকেট ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার বিষয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। কমিশন মনে করে যে, বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের স্বার্থে উল্লিখিত অপরাধগুলোর বিষয়ে সিডিবিএল’র সার্বিক কর্মকাণ্ড তদন্ত করা প্রয়োজন।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে ডিপোজিটরি আইন, ১৯৯৯ এর ধারা ১৩ এর প্রদত্ত ক্ষমতা বলে বিএসইসি উপরোক্ত বিষয়গুলির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আর এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি ও ডিএসইর কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে। এ তদন্ত কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবেন বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মজুমদার। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

অভিযোগ আছে, নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে শেয়ারবাজারের সবচেয়ে স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার সংরক্ষণকারী এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে রয়েছে সার্ভার থেকে তথ্য পাচার ও জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরির অভিযোগ। অনুমতি ছাড়া সার্ভারে ঢোকার কারণে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এক মহাব্যবস্থাপকসহ দুই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। জাল সনদের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন চার কর্মকর্তা। তদন্ত চলছে আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে।

এর আগেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছিল। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু চক্রের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করার কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অসাধুদের বিরুদ্ধেও। এসব কারণে বাজারের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গত বছরের ৩১ আগস্ট কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জ্বালানি–সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জাতীয় সংসদে আনা সাধারণ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠান কাজী ফিরোজ রশীদ সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শেয়ারবাজারের জিম্মাদার প্রতিষ্ঠান সিডিবিএল। কিন্তু যারা নিজেরাই শেয়ার কেনা-বেচা করে, তাদের কাছে যদি এই জিম্মাদার সিডিবিএল রাখা হয়, তাহলে অবস্থাটা কি দাঁড়াবে? শেয়ালের কাছে মুরগী ধার দিলে যা হয়, তাই দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে আমার কাছে কোন শেয়ার আছে, সেটা যদি ওই লোক (সিডিবিএলে জড়িত শেয়ার ব্যবসায়ী) জানে, তাহলে সে কালকে কোনটা কিনবে এবং কোনটা বেচবে, তার পজিশন নেবে। এজন্য বাজারে উত্থান-পতন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিডিবিএলে যারা আছে, তাদেরই শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জে কেনা-বেচা হয়। এটা পৃথিবীর কোন দেশে হতে পারে না। এটা অনৈতিক। তাই সিডিবিএল বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে থাকা উচিত। কিন্তু যারা মার্কেটের সবচেয়ে বড় প্লেয়ার, তাদের কাছেই এটা (সিডিবিএল) দেওয়া হয়েছে। অতএব আজকে জবাবদিহিতা নাই।

প্রসঙ্গত, সিডিবিএলে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সার্ভার থেকে তথ্য পাচার ও জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগের বিষয়টি সংবাদে উল্লেখ করা হয়। এর প্রেক্ষিতেই সিডিবিএলের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com