নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪ | প্রিন্ট
বিদ্যমান শ্রমিক অসন্তোষে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে এবং এ অবস্থা উত্তরণে শ্রমিক-মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে হবে বলে মনে করেন নিট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
শনিবার (৫ অক্টোবর) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা শীর্ষক গোলটেবিল আলেচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
হাতেম বলেন, বিদ্যমান শ্রমিক অসন্তোষে কার্যক্রমে অনুপ্রবেশকারীদের হাত রয়েছে এবং এ অবস্থা উত্তরণে শ্রমিক-মালিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শ্রমিকদের বেশকিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি শ্রমিকদের যেকোনো যৌক্তিক দাবি বিজেএমইএ ও বিকেএমইএ ইতিবাচকভাবে মেটাতে বদ্ধ পরিকর। সেই সাথে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডসমূহ ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য প্রাপ্তির ওপর তিনি জোরারোপ করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, এ মুহূর্তে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কনফিডেন্স বাড়ানোর ওপর আরো অধিকহারে গুরুত্ব দিচ্ছি। খেলাপি ঋণ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অধিকাংশ উদ্যোক্তাদের খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা পুণঃবিবেচনা করা প্রয়োজন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কোভিড পরবর্তী সময় হতে আমরা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিল্প-কারখানায় অসন্তোষের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, উচ্চমূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চহার এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার অস্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারিখাত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, অর্থনীতির সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, দেশের ভালো ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে, ফলে উদ্যোক্তারা প্রত্যাশিত মাত্রায় ঋণ পাচ্ছেন না, সেইসাথে কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা শিল্পখাতে পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করছে, ফলে স্থানীয় চাহিদার জোগান মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি সমন্বিত রাখা বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা চেম্বার সভাপতি শিল্পাঞ্চলসমূহে নিরিবিচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ প্রদানের জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, ১৫ শতাংশের বেশি ব্যাংক ঋণের সুদ দিয়ে পৃথিবীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার, তবে আমাদের উদ্যোক্তাদের সেটা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে কাস্টমস হাউসসমূহে দুনীতির কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, যেটি নিরসনে সরকার ফিন্যান্সিয়াল রিফর্মস কমিটি গঠন করার পাশাপাশি অটোমেশন নিশ্চিত করা জরুরি বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, দেশে মধ্যম আয়ের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যাদের করজালের আওতায় নিয়ে আসা গেলে জিডিপিতে রাজস্বের অবদান অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং লাভবান হবে আমাদের অর্থনীতি। উচ্চমূল্য প্রদান করেও আমাদের শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না, তাই আমাদের অনশোর-অফশোর গ্যাস অনুসন্ধানে আরো জোরারোপ করতে হবে।
লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, আমরা উদ্যোক্তারা এ দেশে থেকেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে অর্থনীতিকে আরো সুদৃঢ় করতে আগ্রহী।
তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে স্থানীয়ভাবে আমাদের চাহিদা কমে গেছে, যেটা উদ্বেগের বিষয়, সেখানে সবাইকে নজর দিতে হবে। ডাবল ডিজিটের সুদ দিয়ে ব্যবসায় মুনাফা করা অসম্ভব, তাই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই অর্থায়ন রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উপর অধিক হারে জোরারোপ করতে হবে। শুধু রেমিট্যান্স ও দাতাদের ওপর নির্ভর করলে চলবে না, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের ওপর আরো অধিকহারে গুরুত্ব দিতে হবে।
ডিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বিচার বিভাগ, এনবিআর এবং বাংলাদেশে ব্যাংকে কার্যক্রমে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। তবে বর্তমান সময়ে তৈরি পোষাক খাতের জুট ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে শিল্প-কারখানায় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়। যেকোনো মূল্যে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে ইমেজ সংকটে পড়তে পারে। এছাড়াও তিনি কারখানায় উৎপাদন অব্যাহত রেখে রপ্তানি সচল রাখতে নিরবিচ্ছিন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণের ওপর জোরারোপ করেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সমস্যা সমাধানে আমরা গত দুই বছরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছি, যার প্রভাব বর্তমান সময়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং ব্যবসায়ীদের আস্থার পরিবেশ উন্নয়নে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে শিল্পখাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে মাঠপর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যেটি মোটেই কাম্য নয়। সরকারকে এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া জরুরি।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, চলতি বছরের জুলাই, আগস্ট মাসে ডিজিটাল পেমেন্ট কার্যক্রমে বেশ হ্রাস পেলেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা বেড়েছে, তবে গতমাসের বন্যা ও পাবর্ত্য এলাকায় অস্থিরতার ফলে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা উল্লেখজনক হারে হ্রাস পেয়েছে, সেই সাথে পাশের দেশে ভিসা জটিলতার কারণেও এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে ই-কমার্সখাতের উন্নয়নে আস্থার পরিবেশ উন্নতির কোনো বিকল্প নেই বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি মীর নাসির হোসেন, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফেকচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, শাশা ডেনিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি শামস মাহমুদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং ফুডপান্ডা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আমব্রারিন রেজা অংশগ্রহণ করেন।
Posted ১:১৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy