নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
নিরবচ্ছিন্নভাবে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে রপ্তানি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে বিশেষত শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা জোরাদার জরুরি। এখন সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাই অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্বি-বার্ষিক পর্যালোচনা (জানুয়ারি-জুন, অর্থবছর ২০২৪); প্রেক্ষিত বেসরকারি খাত’ শীর্ষক সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সেলিম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. খান আহমেদ সাঈদ মুরশিদ।
ড. খান আহমেদ সৈয়দ মুরশিদ বলেন, আমাদের অর্থনীতিবহির্ভূত অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তাই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানোর মাধ্যমে বেসরকারি খাতের আস্থা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর ওপর নজর দিলেই হবে না, সুশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। এছাড়াও খাদ্য নিরাপত্তা, নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
ড. আবু ইউসুফ বলেন, কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে খাতভিত্তিক পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতিভিত্তিক পরিসংখ্যানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার সময় এসেছে। চামড়া শিল্পে শুধু কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা সম্ভব হলে এ খাত থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি সম্ভব।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ্য করছি, শুল্ক হ্রাস করা হলেও বাজারে পণ্যের মূল্য হ্রাসে তেমন প্রভাব পড়ছে না। এক্ষেত্রে মুদ্রানীতি, বাজেট এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখাই অর্থনীতির জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ।
ড. সেলিম আল মামুন বলেন, মুদ্রানীতি বিনিময় হার ও পণ্যের সাপ্লাইচেইনে অস্থিতিশীলতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রত্যাশিত বন্যা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। চলমান সংস্কার কার্যক্রমের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আর্থিক খাতের সংস্কার বাস্তবায়ন, যেখানে এতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের নিম্নআয়ের মানুষকে মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে রেহাই দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে আবার টাকার প্রবাহ বাড়বে এবং বেসরকারি খাত সুফল পাবে। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য বেসরকারি খাতকে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ সুদহার এবং মুদ্রা বিনিময় নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দেশে মূল্যস্ফীতি কমার পরিস্থিতি বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমাদের শিল্প-কারখানায় প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন বাড়িয়ে রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আশা করেন, ব্যাল্যান্স অব পেমেন্টের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জটিলতা অচিরেই নিরসন হবে এবং মার্কিন ডলারের সুদহার কমার ফলে বাংলাদেশি টাকার মান বাড়বে।
ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, উচ্চ সুদহার, উচ্চ বিনিময় হার, ব্যবসায়িক মূলধনের খরচ বৃদ্ধির কারণে সিএমএসএমই খাতে প্রকৃত ঋণপ্রবাহের কার্যকর হার সংকুচিত করছে। তারপরও দেশের অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ করে সিএমএসএমই খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। মূল্যস্ফীতি সহনীয় হলে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি নমনীয় করার প্রস্তাব করেন তিনি।
Posted ১:৪০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy