নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
২০২৩-২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলেই শাস্তিস্বরূপ ব্যাংকসমূহকে লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশের সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ডে (বিবিএডিসিএফ) এক বছর ৬ মাসের জন্য জমা রাখতে হবে।
রোববার (৬ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গির আলম কনফারেন্স হলে নতুন অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা এবং কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ। এ নীতিমালা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি ঋণ বিভাগের পরিচালক কানিজ ফাতেমা, নির্বাহী পরিচালক মো. নূরুল আমীনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। উক্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলেই ব্যাংকসমূহকে বিবিএডিসিএফে সমপরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হবে। জমাকৃত অর্থের উপর ২% হারে সুদ প্রদান করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবং ১৮ মাস পরে অর্থাৎ এক বছর ৬ মাস পরে ব্যাংকগুলোকে অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
কৃষি নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) তাদের নিজস্ব অর্থায়নে যথাক্রমে ২৬ কোটি ও এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লি ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে নতুন করে বেশকিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ। নতুন কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পল্লি অঞ্চলে আয়-উৎসারী কর্মকাণ্ডে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫ লাখ টাকা। ছাদ কৃষিতে অর্থায়ন করতে পারবে ব্যাংক। অর্থাৎ বাড়ির ছাদে বাগান করতে ঋণ পাবেন গ্রাহক। এছাড়া ভেনামি চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ এবং প্রাণিসম্পদ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হবে।
এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, বিদেশী ব্যাংক ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা কৃষি এবং পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ১০৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লি ঋণ পেয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ জন ঋণ পেয়েছে। ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৩ জন নারী মোট ১২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ পেয়েছিল। এছাড়া ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৩ হাজার ৪৪৯ জন কৃষক প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে।
Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৭ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy