নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজটি অন্যতম। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বোর্ডের ফলাফলও বেশ ভাল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিধি অনুযায়ী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের শিক্ষার মান বহুল প্রশংসিত। ২০১৬ সালে কলেজটি দেশসেরা মহিলা কলেজ বিবেচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে। তাছাড়া শিক্ষার গুণগত মান ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিকে ‘মডেল কলেজ’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মোট ৯৮৯ জন ছাত্রীর মধ্যে ৯৭৯ জন উত্তীর্ণ হয়, যার মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৭৪ জন। স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফলও অভাবনীয় ভালো।
কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিকল্পিতভাবে স্বনাম ধন্য এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি নানা অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বেআইনী কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। ইতিমধ্যে এই মহলটি প্রভাব খাঁটিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুর্নিদিষ্ট আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘনের পাশাপাশি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের পরিচালনা পর্ষদের মতামত ছাড়াই অবৈধভাবে ‘ইডেন সরকারি মহিলা কলেজের’ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সৈয়দা মঞ্জুয়ারা সুলতানাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছেন। অথচ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার এক মাত্র বৈধতা রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োজিত পরিচালনা পর্ষদ সুন্দরভাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কেবল শতভাগ সরকারি কলেজগুলোতেই শিক্ষা মন্ত্রণায় সরাসরি প্রেষণে অধ্যক্ষ এবং শিক্ষক নিয়োগ প্রদান ও অব্যাহতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজটি এখনো সরকারিকরণ করা হয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি করতে হলে, অবশ্যই এর ভবনসহ জমিটি সরকারের শর্তাবলী মেনে সরকারের নামে রেজিস্ট্রি দলিল করে দিতে হবে। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে ‘জিও’ আদেশ জারির মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ সরকারি ঘোষণা করা হয়। এর আগে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি বলা যাবে না। আইন অনুযায়ী ‘সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজটি’ এখনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার কোনভাবেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেই।
সূত্র মতে, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আক্তারকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তার আমলে সংঘটিত নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদন্তনাধীন রয়েছে। এদিকে ২০২২ সালের ২৪ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ফাহিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের আগের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কানিজ মাহমুদা আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অব্যাহতি দিয়ে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ ৫ শিক্ষকের মধ্যে একজনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত চিঠি প্রসঙ্গে এই কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসারে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পদ শূন্য হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির বিধিমালা অনুসারে কলেজের জ্যেষ্ঠতম সহযোগী অধ্যাপক নীনা একরামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করা হয়েছে। তিনি দক্ষতার সঙ্গে কলেজ পরিচালনা করছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘ইডেন সরকারি মহিলা কলেজের’ প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষিকা সৈয়দা মঞ্জুয়ারা সুলতানা প্রেষণে উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশের কপি নিয়ে সৈয়দা মঞ্জুয়ারা সুলতানা কলেজে যোগদান করতে আসেন। কিন্তু তাকে যোগদান করতে দেওয়া হয়নি।
পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা আদেশ বাতিল চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদের পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, এই নিয়োগ বিধিবহির্ভূত দেওয়া হয়েছে, যার ফলে তাকে যোগদান করতে দেয়নি। কারণ সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী পরিচালিত। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রেষণে অধ্যক্ষ নিয়োগে পর্ষদের পক্ষ থেকে অনুরোধ ছিল না। সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত প্রেষণে অধ্যক্ষ নিয়োগ করেছে মন্ত্রণালয়। এই নিয়োগ বাতিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পর্ষদের চিঠিতে বলা হয়, কলেজটির সরকারী করণ আদেশে সব নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য পরিচালনা পর্ষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সঙ্গে আলোচনা করে মঞ্জুয়ারার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি। তার নিয়োগ বাতিলে শিক্ষা সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেøখ্য, ২০১৯ সালে কলেজটিকে জাতীয়করণের ঘোষণা দেয়া হয়। এতে দেখা যাচ্ছে, অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী বেতন, পদ মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এমনকি অনেকে চাকরি হারাবেন। তাছাড়া সরকারি করণের আদেশ জারি হওয়ার পর আত্তীকরণে যে ৩/৪ বছর সময় লাগবে সে সময়ে তারা কোনো বেতন ভাতাও পাবেন না। ফলে তারা এ সময় পথে বসবেন এবং মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হবেন। এ কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ ‘ডিড অব গিফটে’ স্বাক্ষর করেনি এবং সরকারও কোনো জিও জারি করেনি। বর্তমানে কলেজে নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ প্রেষণে সরকারি অধ্যক্ষ নিয়োগের অনুরোধও জানায়নি।
Posted ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy