নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী পদে অনুমোদন পেতে প্রার্থীর জীবন বৃত্তান্ত এবং অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্রে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার প্রমাণ মিলেছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) বরাবর গত ৪ জানুয়ারি দাখিল করা আবেদন পত্রে প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কিশোর বিশ্বাসের জীবন বৃত্তান্তে উল্লেখিত বিভিন্ন পদে কর্ম অভিজ্ঞতার বিভিন্ন প্রামাণিক দলিলাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবেদন পত্রে উল্লেখিত তথ্য ভুয়া ও মিথ্যা বলে নিশ্চিত করেছে দেশ অর্থনীতির অনুসন্ধানী দল। এ ব্যাপারে কিশোর বিশ্বাস দেশ অর্থনীতি প্রতিবেদককে ফোনে বলেন, আমি কি তথ্য দিয়েছি, এখন আমার মনে নেই। আইডিআরএ আমার নিয়োগ অনুমোদন করলে আপনাদের অসুবিধা কোথায়।
কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ স্বাক্ষরিত সিইও নিয়োগ অনুমোদন আবেদনে সংযুক্ত ডা. কিশোর বিশ্বাসের জীবন বৃত্তান্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার দাখিলকৃত সার্টিফিকেট অনুসারে দেখা যায়, ১৯৯৮-১৯৯৯ সেশনে তিনি এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন, যেটি ২০০৩ সালে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও এই সেশনটি শেষ হয়েছে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে। একথা খুবই স্বাভাবিক যে একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট তার পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু ডা. কিশোর বিশ্বাস তার জীবন বৃত্তান্তের ১২ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার হামদর্দ টি কোম্পানি লিমিটেডে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই সাথে সিলেটে মেডিকেল কলেজের ছাত্র কিভাবে ঢাকার একটি কোম্পানিতে চাকরি করলো বোধগম্য নয় সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়া ইন্টার্নি ট্রেনিং ‘হোল ডে রেসিডেন্সিয়াল’ হয়ে করতে হয়। তিনি সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন ইন্টার্নি ট্রেনিংএ। অপরদিকে কর্ম অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ২০০৬ সালের ১অক্টোবর গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি কর্পোরেট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ডাক্তারি পাশ করা ইন্টার্নি কোন ছাত্র কিভাবে একই সঙ্গে সিলেটে ইন্টার্নি ক্লাস এবং একটি কোম্পানির কর্পোরেট কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেন।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা, ২০১২ এর ৩(খ) অনুযায়ী সিইও পদে নিয়োগ পেতে মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্ন পদে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বীমা পেশায় ১৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আইডিআরএ’র এমন নিয়মের বেড়ি পার হতে ডা. কিশোর এমনটি করেছেন বলে ধারণা খাত সংশ্লিষ্টদের। খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কোন তামাশা করার জায়গা নয়। উল্লেখ্য এর আগে ২০২০ সালের ২১ জুন ডা. কিশোর বিশ্বাসকে সিইও নিয়োগ দেয় প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স। অতঃপর আইডিআরএ বরাবর সেই নিয়োগ অনুমোদনের জন্য চিঠি দেয় ২০২২সালের ১৪ জানুয়ারি কিন্তু আইডিআরএ অনুমোদন দেয়নি। একই সঙ্গে নতুন এবং যোগ্য সিইও নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দিলেও কোম্পানিটি অদ্যাবধি কিশোর বিশ্বাসকে সিইও হিসেবে বহাল রেখেছে। আইনানুসারে প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কিশোর বিশ্বাস বীমা আইন ২০১০ এর ৮০ ধারা ভঙ্গ করে অবৈধভাবে কোম্পানিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপরন্তু গত ৪ জানুয়ারি পুনরায় নিয়োগ অনুমোদনের আবেদন করেন। যেখানে ডা. কিশোর বিশ্বাস অনেক মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য তার জীবন বৃত্তান্তে উল্লেখ করে বীমা আইনের ২০১০ এর ধারা ১৩১ স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন।
২০১৪ সালে প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে যোগদানের পর তিনি এ কোম্পানির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসাবে কাজ করেন। ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি প্রোটেক্টিভ লাইফে অ্যাসিট্যান্ট ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে যোগ দেন। ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এবং ২০১৯ সালের ১ জুলাই তিনি এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে পদোন্নতি লাভ করেন। কোম্পানি সেক্রেটারি ফরহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রত্যায়ন পত্রে জানা গেছে তিনি ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোম্পানির দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। অথচ জীবন বৃত্তান্তে ডা. কিশোর উল্লেখ করেছেন ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে তিনি প্রোটেক্টিভ লাইফের সিইও (সিসি) হিসেবে নিয়োজিত আছেন।
প্রোটেক্টিভ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড পূর্ণাঙ্গ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ‘২০১৩ সালের ৩০ জুলাই । কোম্পানির প্রতিষ্ঠার ৬ মাস পর থেকেই কিশোর বিশ্বাস এই কোম্পানির সিইও সিসির যে কর্ম অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন, এটা সত্য নয়। তার জমা দেওয়া কাগজ পত্রাদি পর্যালোচনা করে প্রমাণ মিলেছে যে, তিনি আইডিআরএকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
বীমা আইন অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বীমা আইন ২০১০ এর ১৩১ ধারায় যদি কোন ব্যক্তি এইরূপ মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করেন বা এমন কোন দলিল, বিবরণী, হিসাব, রিটার্ন বা প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন অথবা অনধিক ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এ ক্ষেত্রে ড. কিশোর বিশ্বাসকেও এ শাস্তি ভোগ করতে হবে বলে জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।
Posted ৯:৪৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy