নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩ | প্রিন্ট
বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহের জন্য এক কার্গো এলএনজি আমদানি এবং দেশের ১৪,২০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য ওষুধ ক্রয়ের পৃথক দু’টি প্রস্তাবসহ ১২ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৬২৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেয়া হয়।
বুধবার (১৪ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষ অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, দেশের ১৪ হাজার ২০০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৭ প্রকার ওষুধ ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগণের দোরগোঁড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে জনগুরুত্ব বিবেচনায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। উল্লিখিত কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৭টি সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে ২৭ প্রকার ওষুধ সম্বলিত প্রতি কার্টন ওষুধ ২২ হাজার ১৬৪ টাকা হিসেবে ১ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ কার্টন ওষুধ ক্রয় করবে। এতে ব্যয় হবে ২৪৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫১ টাকা।
সভায় ‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি’ প্রকল্পের সেইফটি কনসালট্যান্ট-এর ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে যৌথভাবে (১) আইসটি এবং (২) ডিডিসি-কে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৭৩৩ মার্কিন ডলার এবং ৩১ কোটি ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৩৩ টাকায় ৫ বছর মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরার্মশক প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন তারিখে শেষ হবে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ বছর বৃদ্ধির জন্য ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৩৪ মার্কিন ডলার এবং ২ কোটি ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৪১ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিদুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৩ সালের ১৪তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। পেট্রোবাংলা কর্তৃক ১ কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। এরপর প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি’র (পিপিসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপি’র কাছ থেকে প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৩৯ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। এতে ব্যয় হবে ৫৭৪ কোটি ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩০২ টাকা।
তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা ব্রীজ এপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন’ প্রকল্পের ডব্লিউপি-০৩ প্যাকেজের নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্যাকেজের আওতায় দর প্রস্তাব আহ্বান করা হলে ৯টি দর প্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৮টি প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) মীর হাবিব আলম এবং (২) মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ টাকা।
সাঈদ মাহবুব বলেন, কর্ণফফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে ১৯তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ১৯তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন ৩১৯.৮৭৫ মা. ডলার হিসেবে এই সার কিনতে ব্যয় হবে ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ মার্কিন ডলার। সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১০৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮৭ টাকা।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১২ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার (অপশনাল) আমদানির অপর একটি প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬১৭ টাকা।
সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মে.টন ৩০০.৩৩ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মে.টন ইউরিয়া সার ক্রয়ে ব্যয় হবে ৯০ লাখ ৯ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৮ কোটি ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১৭ টাকা।
তিনি বলেন, চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএ কলোনিতে ৬৫০ বর্গফুটের ২টি ২০তলা আবাসিক ভবন এবং ৮৫০ ব.ফুটের ১টি ২০ তলা আবাসিক ভবন (২২৮ ফ্ল্যাট)নির্মাণের ভেরিয়েশন প্রস্তাবেঅনুমোদন দিয়েছে কমিটি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভবন তিনটি নির্মানে ১১০ কোটি ৮৩ লা ২৩ হাজার ৩৯৫ টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত কাজ হওয়ায় ব্যয়ও বেড়েছে। ফলে ভেরিয়েশন বাবদ ৮ কোটি ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮৭ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
এছাড়াও চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএ কলোনিতে ৮৫০ বর্গফুটের ৩টি ২০তলা আবাসিক ভবন (২২৮টি ফ্ল্যাট) নির্মাণের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়ে কমিটি। নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে ভবন ৩টি নির্মানে ১২৪ কোটি ৫৭ লাখ ১ হাজার ৩৯৫ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ বাস্তবায়নকালে টেন্ডারভুক্ত/টেন্ডার বহির্ভুত কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ সিজিএ কলোনিতে ১০০০ বর্গফুটের ৩টি ২০তলা আবাসিক ভবন (২৮৮টি ফ্ল্যাট) নির্মাণের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্মাতা সংস্থার সঙ্গে ১৬০ কোটি ৩ লাখ ২২ হাজার ৮১২ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ বাস্তবায়নকালে টেন্ডারভুক্ত/টেন্ডার বহির্ভূত কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ ২১ লাখ ২০ হাজার ১৬৫ টাকা ব্যয় হ্রাস করে সংশোধিত চুক্তিমূল্য ১৫৯ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার ৬৪৬ টাকার ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবে ১২,৫০০ মে.টন চিনি আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ৫২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এছাড়াও ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল আমদানির অপর একটি প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ৪টি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান অতিরিক্ত সচিব।
আজকের সভা অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১৩তম সভা এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ২১তম সভা। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য সভায় ৫টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
ক্রয় প্রস্তাবগুলোর মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৩টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১টি, সেতু বিভাগের ১টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। এছাড়া টেবিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রস্তাব উপস্থপান করা হয়। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৬২৯ কোটি ৯৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৬৩ টাকা।
Posted ১:০১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy