সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২০ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম খুচরা ও পাইকারিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

দাম বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। এক সপ্তাহ আগেও এই দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

পাইকারিতে এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২৫ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ২২৫ থেকে ২৫০ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এতে বিপদে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

এই ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা আসছে কুরবানির ঈদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমন হু হু করে দাম বাড়ার পেছনে যে কারণগুলো দেখছেন তারা – পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, উৎপাদন কম হওয়া, শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট, অতি মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা মজুদ করে বাজারে সংকট তৈরির চেষ্টা, সারের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় ও চাঁদাবাজি।

এদিকে দাম না কমলে দু-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্চ থেকে ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে, ফলে দাম বেড়েছে। উৎপাদন মৌসুমে কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর গত মাস পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এ মাসে লাফিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। শিগগিরই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দিলে দাম আরও বাড়বে। আর এর প্রভাব পড়বে কুরবানির ঈদে।

প্রসঙ্গত, কৃষকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সরকার গত ১৫ মার্চ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র বন্ধ করে দেয়। ফলে এখন চাহিদার পুরোটা মেটানো হচ্ছে দেশি পেঁয়াজে।

শুক্রবার (১৯মে) সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে পাইকারিতে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিলো ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আর গত ঈদের আগে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিলো ২২ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া শ্যামবাজারের কোনো আড়তে নেই আমদানি করা পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও দাম বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

এদিকে পাইকারি বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে অন্তত ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিলো ৬০ থেকে ৬৫ টাকা অথচ ঈদের আগে খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

এদিকে দাম না কমলে দু-একদিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেছেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। আমরা লক্ষ্য রাখছি। আপাতত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। যদি দু-একদিনের মধ্যে দাম না কমে তাহলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কাঁচাবাজারের সবকিছু আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি খুব যে খারাপ তা কিন্তু নয়। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি করা পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বৈশ্বিক বিবেচনায় আমরা ভালো আছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের সহ্য করতে হবে। কাঁচাবাজারের দাম কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে।

সূত্রাপুর বাজারের খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন  বলেন, গত এক মাস ধরেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। পাইকারি বাজারে আমাদের কেনাই বেশি পড়ছে। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাবে পড়েছে। মাল কিনতে গেলে বড় ব্যবসায়ীরা বলে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, তাই দাম বাড়তি। আমদানি শুরু হলে আবার পেঁয়াজের দাম কমবে। ততদিন পর্যন্ত বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হবে। এখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সূত্রাপুরে বাজার করতে আসা মো: ইমন সারোয়ার  বলেন, ৮০ টাকার নিচে বাজারে পেঁয়াজ নেই। এবার দেশে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। তবুও সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে বলছে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ নেই বলে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলব?

পাইকারি ব্যবসায়ী স্মৃতি বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার মিজানুর রহমান  বলেন, বর্তমানে বেশি দামের আশায় পেঁয়াজের দেশি মাহাজনরা বা পেঁয়াজের বড় ব্যবসায়ীরা চাঙ্গে মজুদ করে রেখেছে। তারা বাজারে পেঁয়াজ ছাড়ছে ধীর গতিতে। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে। সরকারের উচিত হবে দ্রুত আমদানির অনুমতি দিয়ে দেওয়া। সামনে কুরবানির ঈদ, নইলে পেঁয়াজের দাম আরও বেড়ে যাবে।

এ বিষয়ে শ্যামবাজারের মেসার্স রাজিব বাণিজ্য ভাণ্ডারের সত্ত্বাধিকারী প্রদেশ পোদ্দার বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ। এ কারণে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। দেশি পেঁয়াজ দিয়েই চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। তাই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে নিদারুণ কষ্টে পরিবার নিয়ে সময় কাটছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের। জুনের শেষের দিকে কুরবানির ঈদ। তাই ঈদে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে অসাধু ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে কিনা– সেটি খুঁজে বের করতে বাজার তদারকির বিকল্প নেই। দুর্ভাগ্য, এখনও মাঠ পর্যায়ে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে বাজার তদারকির ওপর জোর দিচ্ছে ক্যাব। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকলেও দেশে পেঁয়াজের উৎপাদনের অবস্থা ভালো। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত চার বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ১৩ লাখ টনের বেশি বেড়েছে। তবু অজানা কারণে বাড়ছে দাম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসেবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়, তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে কেজিতে ৮০ টাকায় ঠেকেছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে,  বৃহস্পতিবারও (১৮ মে) খুচরা বাজারে ৮০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আজও একই দাম চলছে বাজারে। টিসিবির বাজার পর্যালোচনার তথ্য মতে, এক মাসে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১২১.৪৩ শতাংশ। গত বছর এই সময় বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৮ থেকে ৫০ টাকায় অর্থাৎ এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৭৬.১৪ শতাংশ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:৪৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ মে ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com