নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১০ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
স্বদেশ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নতুন পলিসি ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। ইতিপূর্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নতুন বীমা কোম্পানিগুলোর বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা যাচাইয়ের নির্দেশ দেয় বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। সেই নির্দেশে স্বদেশ ইসলামী লাইফে তদন্ত করে কোম্পানির অনিয়ম ও আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে নতুন পলিসি ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা দিলো আইডিআরএ।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন শাহিন বলেন, আইডিআরএ আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আমাদের ভালো-মন্দ দেখভালের দায়িত্ব তাদের। এখন হয়তো আমাদের অসঙ্গতি পেয়েছে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে আবার তারাই আমাদের ব্যবসা করার অনুমতি দিবে। ইতিপূর্বে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কয়েকটি কোম্পানিকে এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সেগুলোকেও পরবর্তীতে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে। নতুন পলিসি ইস্যু না করার ফলে আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে ঠিকই কিন্তু এ সময়ে আমরা নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের দিকে গুরুত্ব দিব। আমার দায়িত্ব পালনকালে নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের হার যেটা কমছিল সেটা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমি যখন ২০১৯ সালে মুখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব ভার গ্রহণ করি সে বছর ব্যবসা করি ৬ কোটি ২ লাখ টাকা, যার মধ্য নবায়ন ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এছাড়া ২০২০ সালে ২ কোটি ৫০ লাখ নবায়নসহ মোট প্রিমিয়াম আয় করেন ১০ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ২০২১ সালে ৪ কোটি ১ টাকা নবায়নসহ মোট ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা প্রিমিয়াম আয় করি। দায়িত্ব নেয়ার সময় কোম্পানির অবস্থান তেমন একটা সুবিধাজনক ছিল না। যার জন্য আমার অর্জিত সাফল্য ফুটিয়ে তুলতে পারিনি। এছাড়া, দায়িত্ব পালনকালে অনেক সময় নিয়মিত বেতন-ভাতা না নিয়ে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এককালীন বেতন-বাতা না দিয়ে ভেঙে ভেঙে বেতন ভাতা দিয়ে মাঠ পর্যায় থেকে প্রথম বর্ষের প্রিমিয়াম ও নবায়নের অর্থ দিয়ে এসবি ও মৃত্যু দাবি পরিশোধ করে গ্রাহক সেবা সুনিশ্চিত রেখে কোম্পানির সুনাম রক্ষা করে কাজ করেছি এবং প্রতিনিয়ত ব্যবসা ও সংগঠন বৃদ্ধি করে কোম্পানিকে একটি পর্যায়ে নিয়ে এসেছি তখনি আইডিআরএ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা এলো। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস এ সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠবো। কোম্পানিকে গ্রাহকবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো।
সম্প্রতি স্বদেশ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহীকে পাঠানো এক চিঠিতে আইডিআরএ’র তদন্তে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়, লাইফ ফান্ড গঠন করতে না পারা, পরিশোধিত মূলধন ও মূলধন থেকে অর্জিত সুদের অর্থ খরচ করা, পলিসি নবায়নের হার কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ায় পলিসিহোল্ডারের স্বার্থে নতুন পলিসি বিক্রয় পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৮ বছরে (২০১৪ সাল হতে ২০২১ সাল) ২১৯%, ১৪৯%, ১২৬%, ৯৪%, ১১৫%, ৪১%, ৪৫% অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে। অনুমোদিত সীমার চেয়ে এই অতিরিক্ত ব্যয়ের হার ৭৮%; যা বীমা আইন ২০১০ এর ৬২ ধারার লঙ্ঘন।
এই সময়ে কোম্পানিটির প্রিমিয়াম আয় ৪২ কোটি টাকা অথচ মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয় ৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট প্রিমিয়াম আয়ের চেয়ে ১১ কোটি টাকা বেশি খরচ করেছে। এ কারণেই কোম্পানির লাইফ ফান্ড তৈরি হয়নি। ফলে গ্রাহকের দাবি পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়েছে। অপর দিকে কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন ও মূলধন হতে অর্জিত সুদও খরচ করেছে বীমা কোম্পানিটি।
২০২১ সালে স্বদেশ ইসলামী লাইফের ২য় বর্ষে নবায়ন প্রিমিয়াম সংগ্রহের হার মাত্র ২৫%। ৩য় থেকে পরবর্তী বছরগুলোতে পলিসি নবায়নের এ হার আরও কমে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, কোম্পানিটির সামগ্রিক ব্যবসায়িক মডেল বা কৌশল অত্যন্ত দুর্বল।
আর্থিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তদন্ত দল মনে করছে, কোম্পানির বীমা ব্যবসার কার্যক্রম বীমাগ্রহীতা তথা বীমা শিল্পের স্বার্থের পরিপন্থী। বীমা গ্রাহকরা ঝুঁকিতে আছে। এ অবস্থায় নতুন বীমা পলিসি (প্রথম বছরের) ইস্যুর মাধ্যমে আরও অধিক সংখ্যক গ্রাহককে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
Posted ৮:৩২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ মে ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy