নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
দেশের ই-কমার্স ব্যবসায় অনেক সম্ভাবনা থাকলেও এখনো এই খাত তেমন বিকশিত হয়নি। এ কারণে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ১০ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা চেয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। একই সঙ্গে তারা পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক্-বাজেট আলোচনায় গতকাল মঙ্গলবার ই-ক্যাব নেতারা এসব প্রস্তাব দেন। ঢাকার আগারগাঁওয়ের নতুন রাজস্ব ভবনে গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। একই সময়ে আলোচনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ রুটি বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি, বাংলাদেশ ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনসহ কয়েকটি সংগঠন।
আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশ উন্নত হচ্ছে, আমাদেরও মনের দিক থেকেও উন্নত হতে হবে। কর-ভ্যাট সুবিধা না পেলে কোম্পানি ভালো করতে পারবে না—এমন মনোভাব পরিহার করা দরকার। যারা কর-ভ্যাট দিতে পারবে না, সেসব ব্যবসা আমাদের দরকার নেই।’
বাজেট আলোচনায় ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো বিনিয়োগস্বল্পতা ও লোকসানি পর্যায়ে রয়েছে। তাই এই খাতের বিকাশে ১০ বছরের কর অব্যাহতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ই-ক্যাব।
ই-ক্যাব আরও জানিয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ই-কমার্সভিত্তিক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ খরচ অনেক বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে অনলাইন কেনাকাটায়। তাই সরবরাহ পর্যায়ে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে ই-ক্যাব। পাশাপাশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামসহ বিভিন্ন সহায়ক কার্যালয় ভাড়ার ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতির দাবিও জানানো হয়। এ ছাড়া ই-কমার্সের বিভিন্ন খাতের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণেরও অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে সব ধরনের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় হস্তনির্মিত রুটি, বিস্কুট ও কেকের দাম বেড়ে গেছে। ফলে কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর তার প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। বর্তমানে হাতে তৈরি পাউরুটি, বনরুটি, বিস্কুটে উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজিতে ১৫০ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। এই সীমা ২০০ টাকা পর্যন্ত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রুটি বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি।
এ ছাড়া বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ) বলেছে, দেশে রঙের ব্যবহার বাড়াতে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা দরকার। বর্তমানে রং উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লেক্সিবল প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএফপিআইএ) দাবি করেছে, গ্রাহক পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর না কেটে বছর শেষে একবারে করের হিসাব করার। কারণ হিসেবে সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, এ খাতের কাঁচামাল আমদানির সময় ৫ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। বিক্রির সময়ও আবার ৭ শতাংশ অগ্রিম আয়কর কেটে রাখা হয়। এতে বছর শেষে দেখা যায়, যে পরিমাণ আয়কর তাঁদের হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি অগ্রিম আয়কর কেটে নেওয়া হয়েছে। কর কর্মকর্তারা সেটি সমন্বয়ের কথা বললেও বাস্তবে তা পাওয়া যায় কম।
এর আগে সকালে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক্-বাজেট আলোচনায় অংশ নেয় পাঁচটি সংগঠন। তাদের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত সব প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ বছরের কর মওকুফ সুবিধার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ)। এ ছাড়া প্লাস্টিক খেলনায় ভ্যাট অব্যাহতির দাবি জানানো হয়।
রপ্তানিমুখী আসবাবসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর কমিয়ে বস্ত্র খাতের মতো নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ আসবাব রপ্তানিকারক সমিতি। একই সঙ্গে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর থেকে শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতিরও প্রস্তাব করে তারা।
শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বন্ড লাইসেন্সের মেয়াদ পাঁচ বছর করা ও বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের আমদানি প্রাপ্যতা তিন বছরে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)।
হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)। একই সঙ্গে অগ্রিম আয়কর থেকেও অব্যাহতি চেয়েছে সংগঠনটি।
এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ছয় লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান)।
Posted ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy