সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আবারও শেয়ার কারসাজির তদন্তে  সাকিবের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট

আবারও শেয়ার কারসাজির তদন্তে  সাকিবের নাম

শেয়ার কারসাজির তদন্তে আবারও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নাম উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির তদন্ত করে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তাতে রয়েছে সাকিবের নাম। তবে সাকিবের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি।

এর আগে আরও অন্তত পাঁচটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম উঠে আসে। কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের নাম থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিএসইসি। তবে বারবার একই কারসাজি চক্রের সঙ্গে সাকিবের নাম উঠে আসছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

এই চক্রের মূল হোতা আবুল খায়ের। শেয়ারবাজারে যিনি হিরু নামে পরিচিত। শেয়ার কারসাজির যে কয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে সাকিবের নাম জড়িয়েছে তার সবগুলোতেই রয়েছে আবুল খায়ের হিরু এবং হিরুর বাবা, বোন ও স্ত্রীর নাম।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজি নিয়ে বিএসইসির করা তদন্তে উঠে এসেছে সাকির নাম। কারসাজির মাধ্যমে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম বাড়ার অপরাধে আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এছাড়া সাইফ উল্লাহকে ৫০ লাখ, এজি মাহমুদ এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৩০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে। এতে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের দাম বাড়ে ৬১ দশমিক ৫০ শতাংশ।

এভাবে দাম বাড়িয়ে আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার বিক্রি করে ৩ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৩ টাকা মুনাফা তুলে নেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ৫৬ লাখ ৭ হাজার ৯৬৩ টাকা মুনাফা রয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ার ক্রেতার তালিকায় চার নম্বরে রয়েছেন সাকিব। এই তারকা ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৬টি শেয়ার কিনে ৪৪ হাজার ২৩৭টি বিক্রি করে দিয়েছেন।

অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান। সাদিয়া ২৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন ২৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০টি।

আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়ায় বিএসইসি আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। তবে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে আরও নাম এসেছে পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আলমগীরের। এছাড়া সাইফ উল্লাহ, এজি মাহমুদ, হোসাম মো. সিরাজ, মো. সাইদুর রহমান মনির, কবির আহমেদ, নওয়াফেল বিন রেজা, মো. হাবিবুর রহমান (বাশার), আলহাজ সাঈদ আহমেদ, সাইফুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, মাকসুদা বেগম, মো. আবদুল কাদির, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্রিমিয়ার ব্যাংক এবং ডিআইটি কো-অপারেটিভ লিমিটেডের নাম উঠে এসেছে কারসাজির তদন্ত প্রতিবেদনে।

এদিকে সম্প্রতি আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফরচুন সুজ, বিডিকম অনলাইন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির বিষয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদনেও সাকিব আল হাসানের নাম জড়ায়।

বিএসইসির তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেনের মাধ্যমে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়ান। গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়ানো হয় ৬০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ সময়ে ৩৪ টাকা থেকে বেড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় ওঠে।

আবুল খায়ের হিরু ও তার সহযোগীরা এ সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার বিক্রি করে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ টাকা মুনাফা তুলে নেন। এছাড়া তাদের কাছে থাকা শেয়ারে আরও ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৫৯ হাজার ৬৩৬ টাকা মুনাফা ছিল।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শেয়ার বিক্রির তালিকায় রয়েছেন সাকিব। এই ক্রিকেটার ইবিএল সিকিউরিটিজে থাকা তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ১১ লাখ শেয়ার কিনে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৩টি শেয়ার বিক্রি করেন।

অপরদিকে এই সময়ের মধ্যে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় আবুল খায়ের হিরু। তিনি এক কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ২৯২টি শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেন এক কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৮৪টি।

আইন লঙ্ঘন করে শেয়ার লেনদেন করার প্রমাণ পাওয়ায় আবুল খায়ের ও তার সহযোগীদের এক কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। তবে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

এছাড়া বিএসইসির তদন্তে গত ২ বছরে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির জন্য মোনার্ক হোল্ডিংসের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়। মোনার্ক হোল্ডিংস ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবর ব্রোকারেজ হাউস হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাকিব আল হাসান। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবুল খায়ের হিরুর স্ত্রী সাদিয়া হাসান।

বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, আবুল খায়ের ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন পর্যন্ত তার সহযোগীদের মধ্যে শেয়ার বেচাকেনা করে ফরচুন সুজের শেয়ারের মূল্যকে প্রভাবিত করেন। এতে ২০ দিনে ফরচুনের শেয়ারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়। ওই সময় ফরচুনের শেয়ারের শীর্ষ ক্রেতাদের মধ্যে সাকিবের নাম ছিল। তিনি তার বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৩৫ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার কিনেছিলেন। একই সময়ে ৩ লাখ ৮৩ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন।

এছাড়া, ২০২১ সালের ১৫ থেকে ৩০ নভেম্বর আবুল খায়ের ও তার সহযোগীরা সিরিজ লেনদেন করে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দাম প্রভাবিত করেন। সে সময় সাকিব ওয়ান ব্যাংকের ৭৫ লাখ শেয়ার কেনেন এবং ১০ লাখ ২০ হাজার শেয়ার বিক্রি করেন। ওই ১৫ দিনে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়ে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

বিএসইসির আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৫ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের দাম ১৭২ শতাংশ বেড়েছিল। সাকিব ওই ব্যাংকের ২৭ লাখ শেয়ার কেনেন এবং এক লাখ শেয়ার বিক্রি করেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য কারসাজিতে ভূমিকা রেখেছিল ডিআইটি কো-অপারেটিভ। আবুল খায়ের ডিআইটি কো-অপারেটিভের চেয়ারম্যান।

এছাড়া বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের মূল্য কারসাজিতে সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংসের নাম জড়ায়। বিএসইসির তদন্তে উঠে আসে, গত বছরের মার্চে মাত্র চার দিনে বিডিকম অনলাইনের শেয়ারের দাম ৪৫ শতাংশ বাড়ে। এ কোম্পানির ২৫ লাখ শেয়ার কিনে সাকিবের মোনার্ক হোল্ডিংস, যা শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় পঞ্চম।

মোনার্ক হোল্ডিংস ওই ৪ দিনে ৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ‘আনরিয়েলাইজড গেইন’ করে। কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার পরও শেয়ারহোল্ডার যখন তা বিক্রি না করে রেখে দেয়, তখন ওই শেয়ারের বাড়তি দামকে ‘আনরিয়েলাইজড গেইন’ বলে। অর্থাৎ একজন ১০ টাকা দিয়ে কোনো শেয়ার কেনার পর তার দাম ১৩ টাকা হওয়ার পরও যদি তিন তা বিক্রি না করেন তাহলে আনরিয়েলাইজড গেইন হবে ৩ টাকা।

এভাবে বার বার শেয়ার কারসাজির তদন্তে সাকিবের নাম আসলেও তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৬:০১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com