নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
জ্বালানি সংকটের কারণে ভুগতে থাকা সিরামিক খাতে গত মাসে রফতানি বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ খাতে রফতানি হয় ২ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য। তবে ওই সময়ে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ২১ লাখ ১০ হাজার ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বা ১২ দশমিক ৩ শতাংশ কম রফতানি হয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ছয় মাস থেকে ধীরে ধীরে গ্যাস সংকট কাটতে শুরু করায় এ খাতে উৎপাদন স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরছে। কিন্তু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং ডলার সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সাধারণ সম্পাদক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্যাসের চাপ পাঁচ মাস ধরে ভালো। আগে যদি ৫০ শতাংশ গ্যাস পেতাম, তাহলে এখন পাচ্ছি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। গ্যাস সমস্যার কিছুটা সমাধান হলেও বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে টাইলস খাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। কারণ টাইলস খাতে বাজারটা অনেক বড়। ফলে তাদের কাঁচামাল আমদানিও অনেক বেশি করতে হচ্ছে। ঠিক সময়ে আমদানি করতে পারছেন না টাইলস উৎপাদকরা। ডলার সংকট না কাটা পর্যন্ত একটু অসুবিধা হবে।’
বিসিএমইএ বলছে, দেশে এখন ৭০টি সিরামিক কারখানা (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার) আছে। এসব কোম্পানিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আছে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত বেশির ভাগ সিরামিক যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, পোল্যান্ড, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ক্রোয়েশিয়া, রোমানিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া, স্পেন, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে। এছাড়া আর্জেন্টিনা, অ্যাঙ্গোলা, অস্ট্রিয়া, ব্রাজিল, বেলজিয়াম, ব্রুনাই, কানাডা, কলম্বিয়া, চিলি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, গ্রিস, হাঙ্গেরি, ইরান, আয়ারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সিরামিকপণ্য রফতানি হচ্ছে। এক দশক আগেও নামমাত্র রফতানি ছিল সিরামিকস পণ্যের। তবে ২০১৬ সাল থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। গত তিন বছরে এ পণ্যের রফতানি বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ।
তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের পর ২০২২ সালে দুই দফায় আরো প্রায় ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। নতুন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয় ১৫৫ শতাংশ। জ্বালানি বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী, বড় শিল্প খাতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে শিল্পগুলোর নিজস্ব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করা হয়েছে, যা আগে ছিল ১৬ টাকা। আবার মাঝারি শিল্পে গ্যাসের দাম ছিল ১১ টাকা ৭৮ পয়সা আর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ছিল ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। এখন উভয় খাতকেই ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করে দিতে হবে।
অন্যদিকে, সিরামিক শিল্পের কাঁচামালের অন্যতম প্রধান উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় গ্যাস। সিরামিক পণ্যের মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ১২ শতাংশই হয় গ্যাসের জন্য। কিন্তু গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও তৈরি করা পণ্যের মূল্য ইচ্ছামতো বাড়ানো যায় না। ফলে উৎপাদকরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
Posted ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৪ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy