সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চামড়া খাতে কর্মপরিবেশ অর্জিত হচ্ছে না ৪ কারণে: বিসিকের গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট

চামড়া খাতে কর্মপরিবেশ অর্জিত হচ্ছে না ৪ কারণে: বিসিকের গবেষণা

দেশে পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে চামড়াশিল্প অন্যতম। স্থানীয়ভাবে চামড়ার পর্যাপ্ত জোগানও রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই শিল্পের রপ্তানি আশানুরূপ নয়। বর্তমানে যে পরিমাণ চামড়া রপ্তানি হচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার উপযুক্ত দাম পান না উদ্যোক্তারা।

দীর্ঘদিনেও দেশের চামড়াশিল্প খাতে কমপ্লায়েন্স (দূষণমুক্ত ও উন্নত কর্মপরিবেশ) অর্জন হয়নি। এর প্রভাব পড়ছে রপ্তানিতেও। কমপ্লায়েন্স অর্জন না করার পেছনে চারটি কারণের কথা উঠে এসেছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

বিসিক যে চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে, সেগুলো হলো—সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) সক্ষমতার অভাব, কমপ্লায়েন্স সম্পর্কে কারখানা বা ট্যানারিমালিকদের যথাযথ ধারণা না থাকা, কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা এবং ট্যানারির অভ্যন্তরীণ পরিবেশের মান উন্নত না হওয়া।

এসব কারণে ট্যানারিশিল্পের মানসনদ প্রদানকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) থেকে স্বীকৃতি পাচ্ছে না সাভারে অবস্থিত ট্যানারিগুলো। দেশে বর্তমানে এলডব্লিউজি সনদ পাওয়া চারটি ট্যানারি রয়েছে, যার সব কটিই সাভারের চামড়াশিল্প নগরীর বাইরে।

মূলত চামড়াশিল্পে কমপ্লায়েন্স অর্জনের ক্ষেত্রে ট্যানারিগুলোর কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, তা জানতে গবেষণাটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিসিকের পরিকল্পনা ও গবেষণা বিভাগ। তবে এতে সিইটিপির দুর্বলতা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়নি। অন্যদিকে ট্যানারির মালিকেরা বলছেন, কমপ্লায়েন্স অর্জনের ক্ষেত্রে সিইটিপিই প্রধান বিষয়। সেটি ঠিক না করে ট্যানারিগুলোর মান নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বিসিক দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।

গবেষণায় যা আছে
সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে বর্তমানে ১৪০টি ট্যানারি চালু রয়েছে। এর মধ্যে ১০৯টি ট্যানারির তথ্য নিয়ে গবেষণাটি করেছে বিসিক। এলডব্লিউজি সনদ পেতে হলে ট্যানারিগুলোকে বেশ কিছু মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে ট্যানারির সামাজিক নিরীক্ষা অন্যতম একটি শর্ত। তবে চামড়াশিল্প নগরীর প্রায় ৮৫ শতাংশ ট্যানারি এই নিরীক্ষা সম্পন্ন করেনি।

চামড়া উৎপাদন প্রক্রিয়ায় অন্যতম ক্ষতিকর পদার্থ ক্রোমিয়াম। কিন্তু শিল্পনগরীর অর্ধেক ট্যানারিই তাদের কারখানায় ব্যবহৃত ক্রোমিয়ামের মাত্রা পরিমাপ করে না। আর ৭০ শতাংশ ট্যানারি কারখানায় ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থ ও বর্জ্যের তালিকা (রেজিস্টার) সংরক্ষণ করে না।

বিসিকের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সাভারের ট্যানারিগুলোর মধ্যে ৩৫টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, বয়লারের অনুমতি নেই ২০টির এবং রাসায়নিক পদার্থ ক্রয় ও সংরক্ষণের অনুমতি নেই ৩৬টির। শিল্পনগরীর শতকরা ৮৬ শতাংশ ট্যানারির ইনকামিং ট্রেসিবিলিটি ও শতকরা ৫৫ শতাংশ ট্যানারির আউটগোয়িং ট্রেসিবিলিটি নেই। অর্থাৎ তাদের কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্যের গন্তব্য জানা নেই।

পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা (ইসিআর) ১৯৯৭ অনুযায়ী, প্রতি টন কাঁচা চামড়া উৎপাদনে সর্বোচ্চ ৩০ ঘনমিটার পানি ব্যবহারের বিধান রয়েছে। কিন্তু ট্যানারিগুলো এর চেয়ে বেশি পরিমাণে পানি ব্যবহার করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

‘ব্যর্থতা ঢাকতে গবেষণা’
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চীনা ঠিকাদারের কাছ থেকে অসম্পূর্ণ অবস্থায় সিইটিপি বুঝে নিয়েছিল বিসিক। সেই অসম্পূর্ণ অবস্থা আর ঠিক হয়নি। বরং দিনে দিনে খারাপ পর্যায়ে গেছে। এখন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ট্যানারিগুলো নিয়ে গবেষণা করছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে বিসিকের মহাব্যবস্থাপক মো. ফরহাদ আহম্মেদ বলেন, শুধু সিইটিপি পূর্ণ ক্ষমতায় কার্যকর হলেই এলডব্লিউজি স্বীকৃতি পাওয়া যাবে, বিষয়টি এমন না। এ জন্য ট্যানারিগুলোকেও নির্ধারিত কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে।

তবে এলডব্লিউজি অর্জনে ট্যানারির অভ্যন্তরীণ মান উন্নয়ন এবং সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি সমান্তরালভাবে করা প্রয়োজন বলে মনে করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মো. আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, দুটি বিষয়ের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি আগে করা প্রয়োজন। এটা ঠিক হলে ট্যানারিগুলোকেও মান অর্জনে চাপ প্রয়োগ করা যাবে।

আরও যেসব বিষয় এসেছে
বিসিকের গবেষণায় বলা হয়েছে, ট্যানারিতে উৎপন্ন কঠিন বর্জ্য খোলা স্থানে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ডাম্পিং ইয়ার্ডে একটি প্রতিরোধী ব্যবস্থা স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে বিসিক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ পরিবেশদূষণ ও শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির মতো কারণগুলো এলডব্লিউজি সনদ না পাওয়ার পেছনে কাজ করছে। সিইটিপির ওপরে চাপ কমাতে অপেক্ষকাকৃত বড় ট্যানারিগুলোকে নিজ ব্যবস্থাপনায় ইটিপি নির্মাণে বাধ্য করা বা পাঁচ-সাতটি ট্যানারির সমন্বয়ে ক্লাস্টার গঠনের সুপারিশ করেছে বিসিক।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১:০৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com