নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট
দেশের ডলার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। অর্থ পাচার ও হুন্ডির অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। এজন্য হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যারা অবৈধ হুন্ডির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাবশালীর পরিচয় আমলে নেওয়া যাবে না। সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাহলে রেমিট্যান্স বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ভালো অবস্থায় যাবে।
দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে বুধবার (৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে বৈঠক করেছে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ও ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. সাজ্জাদ জহির। তারা মূল্যস্ফীতি ও ডলার সংকট নিরসন এবং রিজার্ভ বাড়ানোসহ বর্তমান সংকট মেটাতে অর্থপাচার রোধ ও হুন্ডির অপতৎপরতা বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেগুলো আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল বলে জানিয়েছেন সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
এসময় তিনি বিভিন্ন সংগঠন এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উঠে আসা দিকনির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহির বলেন, দেশের রিজার্ভ কমছে। যার মূলে রয়েছে হুন্ডি। রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে হুন্ডির অপতৎপরতা বেড়ে যাওয়াই এমনটা হয়েছে । একইসঙ্গে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, হুন্ডির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো পরিচয়কে আমলে নেওয়া যাবে না। তাহলে রেমিট্যান্স বাড়বে এবং সমৃদ্ধ হবে রিজার্ভ।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর অর্থনীতি-বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে বৈঠক করে গভর্নর। বৈঠকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে অর্থপাচার ও বেনামি ঋণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংক খাতের নজরদারি জোরদারের পরামর্শ দেয় ইআরএফ।
তার আগে গত ২৩ অক্টোবর গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর সঙ্গে একই বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে একই বিষয়ে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেদিন নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। কেননা এ ধরনের প্রবণতা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে।
এছাড়া উচ্চ মূল্যস্ফীতি চাপে দেশ। সঙ্গে চলছে তীব্র ডলার সংকট। বাজেট ঘাটতি অর্থনৈতিক সংকট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই সমাধান খুঁজতে অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞসহ খাত সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই অংশ হিসেবে বুধবার বিকেলে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়েছিলেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান।
এর আগে একই বিষয় বৈঠকে সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান চলমান অর্থনীতির সংকট সমাধানে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটে বড়দের ঋণ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নীতি সুদহার বাড়িয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নেওয়ার জরুরি বলে জানান। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমাতে ‘সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি’ গ্রহণ এবং খরচ কমানো দরকার। এ মুহূর্তে প্রবৃদ্ধির চেয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীলতা বড় বিষয় বলে জানান সাবেক এই গভর্নর।
এর আগে মূল্যস্ফীতি চাপ, ডলারের দামের অস্থিতিশীলতা এবং লাগামহীন খেলাপি ঋণ এখন অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এমন পরিস্থিতিতে দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সবার আগে মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তর মতে মূল্যস্ফীতি কমাতে পারলে এমনিতেই ডলার বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক বৈঠকে এসব পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ।
Posted ১২:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy