নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
ময়মনসিংহে এক দিনের বৃষ্টিতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৬৪৫ টাকা কোটি টাকা। একই সঙ্গে ৩৬ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতে ধান ও সবজি ডুবে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দিন ও রাতভর রেকর্ড বৃষ্টিতে পুরো জেলাজুড়ে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই দিন ময়মনসিংহ জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় বড় আকারের বাণিজ্যিক খামার রয়েছে অন্তত ৭৪ হাজার। অবাণিজ্যিক ও ছোট আকারের পুকুর আছে এক লাখ ৬৩ হাজার। মাছ চাষি আছে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার। চলতি বছর চার লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। যার বাজার মূল্য অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এক দিনের বৃষ্টিতে ৪১ হাজার পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে মাছ ও অবকাঠামোসহ মোট ৬৪৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান করা হয়েছে। তবে, এক দিনের বৃষ্টিতে ৩৬ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমির চারা ধান নিমজ্জিত হয়েছে। এর মাঝে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত ২০ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমি ও আংশিক নিমজ্জিত ১৫ হাজার ১৯৩ হেক্টর জমির ধান। এদিকে, এই মৌসুমে প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ করা হয়েছিল। বৃষ্টিতে প্রায় ৭২০ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, ধোপাখলা, চরপাড়া, নতুন বাজার, স্টেশন রোড, নয়াপাড়া, ব্রাহ্মপল্লী, কালিবাড়ি, গুলকিবাড়ি, আমলাপাড়া, ভাটিকাশর৷ কালিবাড়িসহ নগরীর অনেক এলাকা হাঁটুপানি ও কোমর সমান পানি জমেছে। এসব এলাকার বাসা বাড়ির দোকানে পানি উঠেছে। অনেক পরিবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। নগরীর বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যায়। এতে নিজ ঘরে আটকা পড়েছেন অসংখ্য মানুষ।
এদিকে, ওই দিন রাত ১০ টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী এলাকার পাওয়ারগ্রিডের কন্টোল রুমে পানি উঠে যায়। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তিন ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমের পানি সেঁচে বের করেন। এ ঘটনায় বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল।
সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের চর ঈশ্বরদিয়া এলাকায় অন্তত ৫০০ একর ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ৮ কাঠা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। গত রাতের বৃষ্টির পানিতে সব ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
সদর উপজেলার চর হরিপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ১০ শতাংশ পুকুর ডুবে ৫০ হাজার টাকার মাছ ভেসে গেছে।
একই এলাকার শামীম আহমেদ বলেন, আমার প্রায় ৩০ কাঠা ধানি জমি তলিয়ে গেছে। তবে, আমার কোন ফিশারি না থাকায় বেঁচে গেছি। এই গ্রামে অন্তত ৩০০ একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘরেও পানি উঠেছে।
চর হরিপুর এলাকার জয়নাল বলেন, ১৭ কাঠা জমি লিজে নিয়ে ফিশারি দিয়েছি। এক রাতের বৃষ্টিতে সব ফিশারি তলিয়ে গেছে। মাছ যেন ফিশারি থেকে না যেতে পারে তাই নেট জাল বাঁধ দিচ্ছি। আমার অন্তত ১৫ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
চর হরিপুর গ্রামের মজিবুর রহমান বলেন, এমন বৃষ্টি দেখছি বহুবার কিন্তু এভাবে পানি জমতে দেখিনি কখনো। আমার ১০ কাঠা ধান জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ১২ কাঠা জমিতে ফিশারি ছিল। সব ফিশারি তলিয়ে গেছে। আমার অন্তত ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে।
একই এলাকার মরম আলী বলেন, আমার ১৭ কাঠা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ১৫ কাঠা ফিশারির মাছ ভেসে গেছে। চর হরিপুর, বাজিতপুর ও আলালপুর গ্রামে অন্তত হাজার একর ফিশারি তলিয়ে গেছে।
জেলা মৎস্য্য কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা বলেন, এই বৃষ্টিতে অন্তত ২২ হাজার মৎস্য চাষি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি বেশ প্রভাব ফেলবে। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হিসাব দিয়েছি।
ময়মনসিংহ কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, আমন ধানের মাঠ ও সবজি খেত পানিতে নিমজ্জিত আছে। ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নির্ণয় করতে কাজ চলমান রয়েছে।
ময়মনসিংহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল বলেন, বাঁধের ১৪টি অংশ ধসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির মাত্রা ও মেরামতের জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
অপরদিকে বৃষ্টিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের কালভার্ট ও রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার ঈশ্বরগঞ্জে এলজিইডি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দফতরের অন্তত তিনটি কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে প্রান্তিক এলাকার।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Posted ১:৫৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর ২০২৩
desharthonity.com | munny akter