নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহু কাঙ্ক্ষিত তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার দুপুর ১২টায় এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করেন তিনি।
বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাবে পরিণত করার লক্ষ্যে ‘স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার সংযোগ’ শ্লোগান নিয়ে টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হয়।
এর আগে, সকাল সোয়া ১০টার দিকে নবনির্মিত এই টার্মিনালে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান একদল শিশু শিল্পী। এরপর পুরো টার্মিনালটি ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন সরকারপ্রধান। চেক ইন কাউন্টার থেকে তাকে একটি নমুনা বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়। এরপর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টার, সিকিউরিটি গেট, মুভিং ওয়াকওয়ে (স্ট্রেট এসকেলেটর) পরিদর্শন করেন। ১০টা ৩৫ মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপবিষ্ট হন তিনি। সেখানে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিয়ে তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানসহ বেবিচক ও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলেই তৈরি শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। নকশাও করেছেন চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকারক প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহরিন। এ নকশা বাস্তবায়ন করছে জাপানি দুই কোম্পানি মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং করপোরেশন।
২০১৭ সালে শাহজালালের ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই টার্মিনালের নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তখন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। খরচের বেশিরভাগ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের (বিমান) সূত্র জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর আজই এ টার্মিনাল ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমানের একটি ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যাবে। এই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করবে বিমান নিজেই।
তৃতীয় এ টার্মিনালে মিলবে উন্নত বিশ্বের আধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মতো নানা সুবিধা। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এ মেগা প্রকল্পে যাত্রীদের জন্য থাকছে অত্যাধুনিক সব সুবিধা।
তৃতীয় টার্মিনালের ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার অ্যাপ্রোন এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। লাগেজ পেতে অপেক্ষার প্রহরও কমে আসবে এ টার্মিনালে। স্থাপন করা হয়েছে স্বাভাবিক ওজনের ব্যাগেজের জন্য অত্যাধুনিক ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট, অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য আলাদা চারটি বেল্ট। প্রথমবারের মতো সংযুক্ত করা হয়েছে ৩টি ব্যাগেজ স্টোরেজ।
নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে রয়েছে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং এটি উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য অন্যান্য উড়োজাহাজ ব্যবহার করতে পারে। নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে। রয়েছে স্ট্রেইট এসকেলেটর, যা দিয়ে যাত্রীরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারবেন না হেঁটেই। অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের জন্য একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল রাখা হয়েছে।
এয়ারলাইন্স লাউঞ্জ, ডেরুম, মুভি লাউঞ্জ, শিশুদের জন্য প্লে-জোন এবং ফুড কোর্ট যাত্রীদের চাহিদা ও স্বাচ্ছন্দ্য পূরণ করবে।
নতুন টার্মিনালটি যাত্রীদের বিশ্বমানের সেবা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পুরোপুরি সেবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত। টার্মিনাল অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন এবং প্রস্তুতির কারণে এই সময়ের প্রয়োজন হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
Posted ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy