নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
বিদ্যমান শুল্ক নীতিমালা হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশে তেমন উৎসাহব্যঞ্জক নয়, তাই কাঙ্ক্ষিত বিকাশে সহায়ক শুল্ক কাঠমো নিশ্চিত করা জরুরি বলে একান্ত আবশ্যক মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বাংলাদেশের আমদানি বিকল্প শিল্প : প্রেক্ষিত হালকা-প্রকৌশল খাত’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রধান অতিথি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামীর সাত্তার বলেন, হালকা প্রকৌশল শিল্পের বিকাশে সহায়ক নীতি সহায়তা দেওয়া সম্ভব হলে আমাদের স্থানীয় খাদ্য, চামড়া ও পাদুকা, ইলেকট্রনিক্স, এগ্রো-প্রসেসিং এবং ঔষধ শিল্পের বেকওয়ার্ক লিংকেজ খাত হিসেবে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনে সক্ষম হবে। পাশাপাশি রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ সম্ভব। ২০২৫ সালে আমাদের জিডিপিতে বেসরকারিখাতের অবদান ২৭.৩৫ শতাংশ উন্নীতকরনে এখাতে সার্বিক সহায়তা নিশ্চিতকরন একান্ত অপরিহার্য।
তিনি বলেন, এ খাতের কাঁচামাল আমদানিতে বর্তমানে বিদ্যমান শুল্ক নীতিমালা খাতটির বিকাশে তেমন উৎসাহব্যঞ্জক নয়, এ অবস্থায় হালকা প্রকৌশল খাতের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ নিশ্চিতকল্পে সহায়ক শুল্ক কাঠমো নিশ্চিতকরণ একান্ত আবশ্যক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া, চীন ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে এবং বাংলাদেশেও সঠিক পথেই রয়েছে, প্রয়োজন যথাযথ নীতি সহায়তা এবং এর সঠিক বাস্তবায়ন। মৌলিক মেশিনারিজ উৎপাদনে আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি বাড়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। ধোলাইখাল, জিঞ্জিরাসহ তৃণমূলের উদ্যোক্তাদের উৎসাহ বৃদ্ধিতে আরো বেশি হারে নজর দিতে হবে।
সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, এ খাতের উদ্যোক্তাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে উদ্যোক্তাদের আর্থিক প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা প্রয়োজন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সেক্টরের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে সরকার কাজ করছে। অটোমোবাইল খাতের রিসার্চ ইন্সটিটিউট স্থাপনে ইতোমধ্যে জাপানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং আশা করেন এ ব্যাপারে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সহায়তা পাওয়া যাবে।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, বাংলাদেশের হালকা-প্রকৌশল খাত হতে বার্ষিক আয় বর্তমানে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা, জিডিপিতে যার অবদান ৩ শতাংশ এবং প্রতিবছর এখাতটি ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখাতে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ আমরা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। ইলেকট্রিকাল ও ইলেকট্রনিক্স খাতের সহায়ক নীতি সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আগামী বছরই ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি সম্ভব।
ফেয়ার গ্রুপের প্রধান মার্কেটিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেছবাহ উদ্দিন বলেন, স্থানীয় হালকা-প্রকৌশল শিল্প খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষাখাতের সংষ্কার, নীতি সহায়তা ও নীতির ধারাবাহিকতা একান্ত আবশ্যক, যা স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। তবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সহায়তার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ এখাতে খুবই জরুরি।
মেঘনা গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ তানভীর বলেন, আমাদের উৎপাদিত বাইসাইকেল রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাইসাইকেলের রপ্তানির জন্য আমাদের টেস্টিং ল্যাব নেই, যার কারণে বিদেশের ল্যাবসমূহে উৎপাদিত পণ্যের টেস্টিংয়ের প্রতিবেদন পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এ অবস্থায় দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্মত একটি টেস্টিং ল্যাব স্থাপনে সরকারি বিনিয়োগ খুবই জরুরি।
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরশাদ হক বলেন, এ শিল্পের বিকাশে কমপক্ষে ১০ বছর মেয়াদী নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থায় নিজেদের সম্পৃক্তকরণ খুব জরুরি।
তিনি জানন, আমেরিকাভিত্তিক ওয়ার্লপুল ইতোমধ্যে যৌথভাবে বাংলপাদেশে বিনিয়োগ করেছে। আমাদের প্রচুর মানব সম্পদ রয়েছে, তবে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলতে হবে।
মুক্ত আলোচনায় ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি মাতিউর রহমান বলেন, এখাতের আমদানি শুল্ক হ্রাস, দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং কারিগরি শিক্ষা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।
Posted ৭:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy