নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩০৪.৮৩ ডলার হিসেবে এতে মোট ব্যয় হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড এসব গম সরবরাহ করবে।
সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সে অনুযায়ী গত ৯ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাজেটে গম আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদপ্তর আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে। নির্ধারিত সময়ে ১০টি সিডিউল বিক্রি হয়। এর মধ্যে চারটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। মূল্যায়ন কমিটি চারটি দরপত্রকেই রেসপন্সিভ ঘোষণা করে।
দরপত্রে অংশগ্রহণকারী সিঙ্গাপুরভিত্তিক মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩০৪.৮৩ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। অন্য তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স সিরিঅ্যাল করপস ট্রেডিং এলএলসি প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩০৯.০০ ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স গ্রেইন ফ্লাওয়ার ডিএমসিসি ৩১৩ মার্কিন ডলার এবং সুইজারল্যান্ডের মেসার্স অ্যাসটন অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসএ প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩২২.২২ মার্কিন ডলার উল্লেখ করে।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি বিদ্যমান বাজারমূল্যেও গ্রহণযোগ্য মাত্রার সঙ্গে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরের সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গত ৫ আগস্ট, ২০২৩ পর্যন্ত অ্যাগ্রিমার্কেট উইকলি ইনডেক্স ওয়েবসাইট থেকে সর্বশেষ এফওবি দরের সঙ্গে জাহাজ ভাড়াসহ অন্যান্য সম্ভাব্য আনুসঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া দরের সঙ্গে প্রাক্কলিত বাজারমূল্যের তালিকা করে। এতে গামের দাম রাশিয়া থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৩০৫.০৮ মার্কিন ডলার, ইউক্রেন থেকে ২৬৬.৬৬ মার্কিন ডলার, ফ্রান্স থেকে ৩১৩.৯৯ মার্কিন ডলার, আর্জেন্টিনা থেকে ৩৯৭.২৫ মার্কিন ডলার, অস্ট্রেলিয়া থেকে ৩৩৩.৮৭ মার্কিন ডলার, কানাডা থেকে ৪০৪.৪০ মার্কিন ডলার এবং আমেরিকা থেকে ৪০৭.৪৫ মার্কিন ডলার পাওয়া যায়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে কোটেশনে অংশগ্রহণকারী চারটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য দরদাতা ঘোষণা করে। গ্রহণযোগ্য দরদাতাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনালের দাখিল করা দরপত্রে উদ্ধৃত দর প্রতি মেট্রিক টন ৩০৪.৮৩ মার্কিন ডলার। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট এবং খাদ্যশস্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন ৩০৪.৮৩ মার্কিন ডলার (প্রতি কেজি ৩৩.৩৭৮৮ টাকা) গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করেছে। সেই হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করতে সরকারের ব্যয় হবে ১৬৬ কোটি ৮৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি অনুয়ায়ী গমের বর্তমান মজুত ২ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সরকারি বিতরণ খাতে ৬ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন এবং নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনসহ মোট ৯ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন গম প্রয়োজন হবে। খাদ্য বিভাগের ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক উৎস থেকে আমদানির জন্য নির্ধারিত পরিমাণ ৬ লাখ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনের মধ্যে প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্যাকেজে প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩০৪.৮৩ ডলার। এর আগের প্যাকেজ-১ এর আওতায় আমদানি করা প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়েছে ২৯৭.৪৭ ডলার। অর্থাৎ প্যাকেজ-১ এর চেয়ে প্যাকেজ-২ এ প্রতি মেট্রিক টন গম আমদানি করতে ৭.৩৬ ডলার বেশি ব্যয় করতে হবে।
এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
Posted ১:৩১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy