নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২০ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
বৃহস্পতিবার চালু হওয়ার পর থেকে গতকাল শনিবার রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রায় ৪০ হাজার ব্যক্তি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে চার হাজার ৩৫২ জন চাঁদাদাতা তাদের প্রথম কিস্তি জমা দিয়ে নিবন্ধন শেষ করেছেন। পেনশন কর্তৃপক্ষের হিসাবে মোট চাঁদা জমা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। নিবন্ধন করতে অনেকে বিপত্তিতে পড়ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান বলেন, উদ্বোধনের দিন থেকেই বেসরকারি খাতের চাকরিজীবী ও প্রবাসীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে টাকা জমা দিয়ে পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। আবার অনেকে শুধু নিবন্ধন করে রেখেছেন। আশা করা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে তারাও টাকা জমা দেবেন।
তিনি আরও বলেন, পেনশনের নিবন্ধন থেকে শুরু করে চাঁদা পরিশোধ সবকিছুই ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে করা যাচ্ছে। মানুষ তাদের সুবিধাজনক সময়ে নিবন্ধন করছেন। এতে আবেদনকারীর সংখ্যাও প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিকভাবে চার ধরনের নাগরিকের জন্য প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী– এ চার প্রকারের প্যাকেজ রাখা হয়েছে। পেনশন কর্মসূচির আওতায় যে কোনো স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন গ্রাহক। গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের ৭৫ বছর বয়স হতে যত বছর বাকি থাকবে, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন তুলতে পারবেন। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
৬০ বছর বয়স থেকেই পেনশন
কোনো গ্রাহক পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পর টানা দশ বছর চাঁদা দিলেই তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে পেনশন পেতে তাকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। উদাহরণ দিয়ে এভাবে বলা যায় যে, কোনো গ্রাহক ৪০ বছর বয়সে পেনশন কর্মসূচিতে অংশ নিলেন। তারপর ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত নির্ধারিত হারে চাঁদা দেওয়ার পর চাঁদা বন্ধ করে দিলে প্রথম তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তারপরও যদি গ্রাহক চাঁদা পরিশোধ না করা হয়, তাহলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে গ্রাহককে পেনশন সুবিধা পেতে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর জমাকৃত টাকা ও সরকার ঘোষিত মুনাফার স্থিতির ভিত্তিতে ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি প্রতিমাসে পেনশন পাবেন।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে (www.upension.gov.bd) গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যেসব প্রবাসীর বাংলাদেশের এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে কর্মসূচিতে যুক্ত হতে পারছেন। নিবন্ধনের পর একটি নম্বর দেওয়া হচ্ছে, যা দিয়ে চাঁদা পরিশোধসহ সব কাজ করা হচ্ছে। গ্রামীণ পর্যায়ে নিবন্ধন করতে সহযোগিতা করছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। কেউ অনলাইনে পেনশন স্কিমের জন্য নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে সোনালী ব্যাংকের যে কোনো শাখায়ও তা করা যাচ্ছে।
তবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতি রয়েছে। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাদের এখনও নমিনি করা যাচ্ছে না। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দু-একদিনের মধ্যেই জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নমিনি করার পদ্ধতি যুক্ত করা হবে। এদিকে মোবাইল অ্যাপস চালুর উদ্যোগ থাকলেও এখনও তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। কেউ নিবন্ধনে আটকে গেলে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেওয়ার জন্য www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে দুই মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গতকাল বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের জটিলতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
Posted ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২০ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | munny akter