নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে চান দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা। তারা জানান, গত ১৪ বছরে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, আগামীতে আরও হবে। বর্তমান সরকার শিল্পের বিকাশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে, এখন প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি আস্থা রয়েছে, অবিলম্বে ডলার সংকটসহ বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংকট দূর হবে।
শনিবার (১৫ জুলাই) স্মার্ট বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা। দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এ সম্মেলনের আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতা।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী মীর নাসির বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে তা হয়নি। আমাদের পায়রা বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর হয়েছে। পদ্মাসেতু পার হলে গর্বে বুক ভরে ওঠে। দক্ষিণের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবে এ সেতু।
তিনি বলেন, আমরা ডলার সংকটে পড়েছি। এ নিয়ে পরামর্শ হলো, শ্রমিকরা যারা দেশের বাইরে যান, তাদের কমিটমেন্ট করাতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে। গ্যাসের সংকট দূর করতে বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
এনবিআর প্রসঙ্গে মীর নাসির বলেন, বাজেটে এনবিআরের ভূমিকা রয়েছে। তবে তাদের সক্ষমতা নেই, ঘাটতি থাকে। তাদের আরও নার্সিং করতে হবে। ট্যাক্স মাত্র ৩০-৪০ লাখ লোক দেয়, এক্ষেত্রে নেট বাড়াতে হবে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মাতলুব আহমেদ বলেন, আমার বক্তব্য নেই, স্বপ্ন নিয়ে বলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী স্বপ্ন দেখেন, তা বাস্তবায়িত করেন। আমরা তেল-ডিজেল ছাড়া গাড়ি চালাতে চাই, যেটা হবে মেড ইন বাংলাদেশ। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ হারুন বলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ ডিজিটাল এসেছে বলেই আমরা স্মার্ট বাংলাদেশে এসেছি শেখ হাসিনার হাত ধরে। বিশ্বের আধুনিকতার মাঝে আমরা। শেখ হাসিনার উন্নয়ন হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক। স্মার্ট বাংলাদেশে তরুণ সমাজকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা থাকবে। এসএমইর মাধ্যমে জাপানের মতো রাষ্ট্রগুলো উন্নত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কনজ্যুমার আইটেম নিজে প্রডিউস করো, এটা আমাদের করতে হবে। একসময় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে দুই দিন সময় লাগতো। আজ পদ্মাসেতুর কারণে অল্প সময়ে আসা যায়। আমরা আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চাই। আপনারা সবাই সহযোগিতা করবেন।
সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিজিটাল ক্ষেত্রে দেশ এগিয়েছে বলেই করোনার মধ্যেও আমরা ভালো অবস্থানে ছিলাম। আগামীতে সেবা ও শিল্প খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করতে হবে। এজন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জ্বালানির অভাবে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি করা লাগছে। শিল্প বিকাশে ভৌত অবকাঠামো প্রধান শর্ত। পদ্মাসেতুসহ নানা প্রকল্প আমাদের উন্নয়নে কাজ করছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা মনে হলে ১/১১’র কথা মনে আসে। এর কথা মনে হলে রাজনীতিতে আসার কথা মনে হয়। আবারও তত্ত্বাবধায়কের নামে ১/১১ নিয়ে আসলে জুলুম-অত্যাচার হবে। যমুনা গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান জেলে ছিলেন, সালমান এফ রহমান জেলে ছিলেন, আমি দেশে ছিলাম না। কিন্তু আমার কর্মচারীদের জেলে নেওয়া হয়েছিল। এ দেশে যত নামিদামি ব্যবসায়ী, সবাইকে তারা জেলে পুরেছে। কী ছিল তাদের উদ্দেশ্য?
তিনি বলেন, ১৭ কোটি মানুষ আমাদের শক্তি। চীন, ইউরোপ, আমেরিকা সবাই আমাদের নিয়ে ভাবে। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি ঘুরে গেছেন। কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বলেননি। সবাই বলেছেন, সুন্দর নির্বাচন হতে হবে। এটা নিয়ে দ্বিমত নেই। আমরাও চাই সুন্দর নির্বাচন, যেটা প্রধানমন্ত্রীও চান। আমরা শেখ হাসিনায় আস্থা রাখতে চাই। তিনি সারাবিশ্বের চমক, কূটনৈতিকে চমক। ব্যবসায়ীরা আপনার সঙ্গে আছে।
ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, আজ থেকে সাড়ে ১৪ বছর আগে বারাক ওবামা নির্বাচনের সময় বলেছিলেন, ‘চেঞ্জ’। শেখ হাসিনার ইশতেহার ছিল ‘পরিবর্তনের অঙ্গীকার’। সাত লাখ মানুষের ঘর বানিয়ে দিলেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে পরিবর্তন করেছেন। আর এখন সাত সাগর তের নদী পার হয়ে মানুষ আসবে আর বলবে পরিবর্তন, এটা হতে পারে না। গত ১৪ বছরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও হবে। কারণ অনেক প্রকল্প আধা-আধি হয়েছে। পরিবর্তন হলে এসব প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সুপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে দেশ অনেক এগিয়েছে। গত ১৪ বছরে বাঙালি জাতির মর্যাদা উন্নত অবস্থায় পৌঁছেছে, বিকাশমান পাঁচ দেশের অন্যতম বাংলাদেশ। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন।
ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সমীর সাত্তার বলেন, টেকনিক্যাল ও ভোকেশনালকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমাদের যে ডেমোগ্রাফি, তা অন্য দেশে নেই। আগামীতে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প আসবে। এর আলোকে বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আশা করি আগামীতে বেসরকারি খাত ভিত্তিক একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।
সভাপতির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের সময়ে কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। মেধাবী ও শিক্ষিতরা এগিয়ে আসছে কৃষিতে, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। শুধু কৃষি নয়, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে আসছেন, আমাদের (ব্যবসায়ীদের) যে অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেটি ধরে রাখার জন্য আপনাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। এজন্য সব ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। আমরা সবাই আগামীতে আপনার নেতৃত্বে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই।
Posted ১:৫৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy