নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন বাংলাদেশের নন্দিত ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। চট্টগ্রামের একটি হোটেলে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন তিনি।
বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে ২১ বলে ১৩ রান করেন দলনায়ক তামিম। পরদিন দিলেন অবসরের ঘোষণা! সাগরিকার ওই ম্যাচটিই ৩৪ বছর বয়সী ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক পদচারণা।
বিদায়ের ঘোষণায় কেঁদেছেন তামিম। তার কন্ঠা ভারী হয়ে আসে। মাথা নিচু করে চোখও মুছতে দেখা যায় তাকে। গুজব রয়েছে তার ওপর প্রচন্ড ক্ষেপে আছেন হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। চাপের মুখেই তিনি বিদায় নিলেন। যদিও তামিম বললেন ভিন্ন কথা। তিনি জানালেন, সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করেই নেননি। তার কথায়, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের (বুধবার) ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি।’
কারণ নিয়ে ফিসফাঁস হচ্ছে। তাই তিনি নিজে থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট করলেন। তার কথায়, ‘এটার পেছনে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এটা নিয়ে ভাবছিলাম আমি। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, যেটা আমার মনে হয় না এখানে বলার দরকার আছে। এটা না যে হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বেশ কিছু দিন ধরেই কথা বলছিলাম, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলছিলাম। আমার মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর উপযুক্ত সময় এটিই।’”
২০০৭ সালে শুরু। শেষ ২০২৩ সালে এসে। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারের সমাপ্তির ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘এটাই আমার শেষ। আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমি এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলছি। আমি সতীর্থ, কোচ, বিসিবি কর্মকর্তা, আমার পরিবারের সদস্য এবং এই দীর্ঘ যাত্রায় যারা আমার সঙ্গে ছিলেন, আস্থা রেখেছেন আমার ওপর, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি সমর্থকদেরও ধন্যবাদ দিতে চাই। আপনাদের ভালোবাসা ও আস্থাই বাংলাদেশের হয়ে আমাকে সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য আপনাদের প্রার্থনা কামনা করি। আশাকরি আপনারা আমাকে প্রার্থনায় রাখবেন।’
চোটের সঙ্গে গত কয়েক বছর লড়ছিলেন তামিম। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলতে পারেনি। পিঠের নিচের অংশের চোটে গত মাসের মাঝামাঝি সময় আফগানিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টেও শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান তিনি। চলতি ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিন সবাইকে চমকে দিয়ে জানান, তিনি খেলবেন, তবে শতভাগ ফিট নন। সেদিন এটাও জানান, প্রথম ম্যাচ খেলার পর অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। ওই ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। দলও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। তাই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েই কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে পুরোপুরি বিদায় বলে দিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা এই ব্যাটসম্যান?
২৪১টি ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৩১৩ রান করেছেন তিনি। বর্তমানে যারা খেলছিলেন তাদের মধ্যে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার পরেই ছিলেন তামিম। এছাড়া টি২০ ক্রিকেটে ও হাজার ৭১০ রান করে তিনে ও টেস্টে ৫ হাজার ১৩৪ রান করে দুইয়ে অবস্থান করছেন তামিম। ওয়ানডে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪টি, টেস্টে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ১০টি ও টি২০তে ১টি সেঞ্চুরি রয়েছে তার। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার পরিসংখ্যান বুকটা এখানেই থেমে গেল।
গত বছর প্রায় একই সময় টি২০ ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম। টেস্ট ও ওয়ানডে খেলে যাচ্ছিলেন। যদিও চোটের কারণে থামতে হলো তাকে। গত এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।
তামিম বলেছেন, ‘আমি সব সময় বলেছি ক্রিকেট খেলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার ছোট চাচার হাত ধরেই ক্রিকেটে এসেছি। যারা আমাকে এই পর্যায়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
Posted ৩:৫০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুলাই ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy