সোমবার ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সাধারণ মানুষ

চড়া মাছ মাংস পেঁয়াজ রসুন আদার বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৭ মে ২০২৩ | প্রিন্ট

চড়া মাছ মাংস পেঁয়াজ রসুন আদার বাজার

রাজধানীসহ সারাদেশেই হুহু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ইচ্ছামাফিক নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করেই চলছে। সারাদেশেই নিত্যপণ্যের জিনিসের দামে অস্বস্তিতে সাধারণ ক্রেতারা। সবজি থেকে মাংস, মাছ, আলু, পটল কিছুতেই যেন নিস্তার নেই। সব জিনিসেরই দাম বেশি ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্য বিত্তের নিরব কান্না যেন দেখার কেউ নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের সরকার এবং প্রশাসন জিম্মি হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবজির বাজারের সাথে মাছ, গরু ও মুরগির গোশতের বাজারেও কোনো সুখবর নেই। নতুন করে দাম আর না বাড়লেও আমিষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গত শুক্রবার (২৬ মে) রাজধানীর নিকেতন বাজারও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র মিলেছে। এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২৩০ থেকে ২৫০ টাকার নিচে ব্রয়লার মুরগি মিলছে না। সোনালি মুরগির দাম ছুঁয়েছে ৩৩০-৩৫০ টাকা। গোশতের পাশাপাশি মুরগির ডিমের দামও এখন বাড়তি। ডিমের ডজন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আর হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পোলট্রি বাজারের এমন পরিস্থিতির জন্য বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করছেনক্ষুদ্র খামারিরা।

দুইমাস আগেও ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে যে ব্রয়লার মুরগি কেনা যেতো এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়। কোথাও কোথাও ২৫০ টাকা। এক কেজি সোনালী মুরগি কিনতে লাগছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগির দর উঠেছে ৫৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে, এই সময়ের ব্যবধানে কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে খাসির গোশত এখন বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ টাকা। আর ১০০ টাকা বেড়ে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।

মহাখালী কাঁচা বাজারে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে তো বেড়েছেই। আর কমার নাম নেই। ২৩০ টাকা কেজি দরে কিনলাম। বিকেলে আসলেই হয়ত দেখবো ২৫০ টাকা। এটাই ম্যাজিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। আরেক ক্রেতা সরকারি চাকরিজীবী বলেন, ইলিশ মাছ কিনতে চাচ্ছিলাম। দাম শুনে তো মাথা ঘরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বাজারে রুইমাছ প্রতি কেজি ২৮০-৩০০ টাকা, তেলাপিয়া, ১৮০-২০০ টাকা, কার্প ২৫০-৩০০ টাকা, ইলিশ ১২০০-১৪০০ টাকা, মলা ৪৫০-৫০০ টাকা, শিং ৩৮০-৪২০ টাকা, পাবদা ৩০০-৩৫০ টাকা এবং কই মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

গোশতের দাম শিগগিরই কমছে না। মূলত ব্রয়লারের বাজার সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ায় দাম কমছে না। অন্যদিকে, মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন মাছের দাম নাগালের মধ্যেই আছে।
এছাড়া এক মাস আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সেটি এখন বাজারে ক্রেতাপর্যায়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের পর এখন আবার বেড়েছে আদার দাম। ক্রেতাপর্যায়ে মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। এছাড়া দেশি রসুন (ছোট) প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন (বড়) প্রতি ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতাপর্যায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।

গত শুক্রবার সাধারণ মানের আদা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হলেও চায়না আদা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, বাজারে দেশি আদা থাকলেও আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দাম। এই দাম আরও বেড়েছিল। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকায় এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৮০ টাকা। এক মাসে আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। ফলে এক মাসে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এদিকে, নিকেতন ও মহাখালী কাঁচা বাজারে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো কেজি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৬০-৬৫ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া (ফাঁলি) ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০-১০০ টাকা, জালি কুমড়ার পিস ৬০ টাকাএবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাক-সবজির এমন ঊর্ধ্বধমুখী প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী নিয়ামত। তিনি বলেন, মাছ কিনে এলাম শাক-সবজির বাজারে। ভাবলাম বেঁচে গেছি। এসে দেখি ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। এটা অন্যায়। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ, কিন্তু এরপরও এত দাম সবজির! কী করে সম্ভব?

এক মাস আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সেটি এখন বাজারে ক্রেতাপর্যায়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের পর এখন আবার বেড়েছে আদার দাম। ক্রেতাপর্যায়ে মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। এছাড়া দেশি রসুন (ছোট) প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন (বড়) প্রতি ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতাপর্যায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।

কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারিতে আদা কিনে এনে খুচরা বিক্রি করেন হাবিবুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমাদের দেশে আমদানি করা আদার প্রায় অর্ধেক আনা হয় চীনা আদা আর বাকি আদা বার্মিজ, ইন্দোনিশায়া, ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশ থেকে। কিছুদিন ধরে বাজারে চীনা আদা আসছে না তাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এবার দেশি আদার উৎপাদনও কম হয়েছে সব কিছু মিলিয়ে আদার দাম বাড়তি যাচ্ছে। তবে ঈদের আগে আর আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। প্রতিকূল আবহাওয়াসহ নানা কারণে প্রায় ৩৫ শতাংশের মতো পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বর্তমানে মজুত আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। সে হিসাবে পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয় তবুও এক মাসের ব্যবধানে বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুন হয়ে প্রতি কেজির দাম ৮০ টাকায় গিয়ে ঠেকে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ৭:৫৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ মে ২০২৩

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com