নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের পাওনা লভ্যাংশের এক টাকাও ছাড় দেওয়া হবে না। সুদে আসলে সব আদায় করা হবে। কোনো অজুহাত শোনা হবে না। লভ্যাংশ ফেরত না দিলে অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাব।
রোববার (১৬ এপ্রিল) শেয়ারবাজারে বর্ষবরণের আমেজে নবতর উদ্ভাবন সিএমএসএফের তহবিল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভাটির আয়োজন করে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বার্ডোর সাবেক চেয়ারম্যান ও সিএমএসএফের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য। বছর শেষে সেই লভ্যাংশ তাদের কাছে যাচ্ছে না। তারা পাচ্ছেও না। বিভিন্নভাবে রয়ে যাচ্ছে অন্য কোথাও। দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ না দিয়ে অন্য কোথায় বিনিয়োগ বা ব্যবহার হচ্ছে। মেরে খাচ্ছে। দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের খাতে ব্যয় করছে। কিন্তু কথা হলে এটা অন্যের আমানত। এটা বেমালুম ভুলে যায়। এ ধরনের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, যারা বিনিয়োগের লভ্যাংশ পাচ্ছে না বা লভ্যাংশ দেওয়ার বিনিয়োগকারী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের সেই মুনাফা অলসভাবে পড়ে আছে। যা ব্যবহার হচ্ছে না। এমন অর্থ পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা মতো আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। সেই অর্থ বা লভ্যাংশ সঠিক ব্যবহারের জন্য আমরা সিএমএসএফ গঠন করি। এরপর দেখি, তারা অটোভাবেই বিনিয়োগকারীদের খুঁজে পাচ্ছে। তাদের পাওনা আমানত ফেরতও দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এরপরও এই পর্যন্ত ১ হাজার কোটি টাকার মতো লভ্যাংশ আদায় হয়েছে। আরও লভ্যাংশ আসার পথে রয়েছে।
শিবলী রুবাইয়াত আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের না দেওয়া লভ্যাংশ আদায়ে কোম্পানিগুলোতে দফায় দফায় তাগিদ দিচ্ছি। অপরদিকে তারাও দফায় দফায় সময় নিচ্ছে। কিন্তু লভ্যাংশ দেওয়ার নাম নেয় না। এরপর আমরা অনেক ভালো ব্যবহার করছি। ধৈর্য ধরে আছি। সময়ও দিচ্ছি। প্রতিষ্ঠানের নাম খারাপ হবে ভেবেই সময় পাচ্ছে। এরপর আপনারা লভ্যাংশের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না। কিন্তু এখন আমাদের কঠোর হবার সময় হয়েছে। আপনারা সতর্ক হোন। সামনে দিনে এই সুযোগ আর পাবেন না। আমাদের বিএসইসির বোর্ড সভায় সামনে এ বিযয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, লভ্যাংশ বাবদ বিমায় ৭০ কোটি টাকা রয়েছে, শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোথায়, কিভাবে সেটা আমার জানা নেই। তবে আমরা চেষ্টা করছি, অবন্টিত লভ্যাংশ যথাস্থানে ফিরিয়ে দিতে। এই ব্যাপারে আমি সিএমএসএফকে সব ধরনের সহায়তা করবো। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের অনেক বীমা কোম্পানি দেউলিয়া হওয়ার পথে। সেসব কোম্পানিগুলোকে বাঁচানোর রাস্তা বের করার আহ্বান রাখেন।
সিএমএসএফের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান শেয়ারবাজার ভাইব্রেন্ট। সামনে আরও ভাইব্রেন্ট হবে। সেই লক্ষে আমরা কাজ করছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের দাবি আদায়ে কাজ করছি। বিনিয়োগকারীদের দাবি নিষ্পতি হচ্ছে। এটা চলমান থাকবে। অবন্টিত লভ্যাংশ আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি অলস পড়ে থাকা লভ্যাংশ খুঁজে বের করতে। এই ব্যাপারে পরিকল্পনা করেছি। এরই লক্ষে ব্যাংক-বীমার বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা হচ্ছে।
এদিকে, সিএমএসএফ ইতোমধ্যে ৫৩৭ বিনিয়োগকারীর নগদ ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮২ টাকা এবং ২০৩ জন বিনিয়োগকারীর ২ লাখ ৪ হাজার ২০৪টি শেয়ারের দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে ৬৪ জন বিনিয়োগকারী ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২৩২ টাকা এবং ৪৮ জন বিনিয়োগকারীর ৬২ হাজার ৫৫৬টি শেয়ারের দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, ড. মো. মিজানুর রহমান, ডিএসইর নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।
Posted ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy