নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
এক সপ্তাহ আগে বঙ্গবাজারের যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তাতে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে মোট ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব দিয়েছে একটি তদন্ত কমিটি।
ওই ঘটনায় গঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটির মঙ্গলবার দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে এ হিসাব দেওয়া হয়।
এই অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতার কোনো ইঙ্গিত তদন্ত কমিটি পায়নি। সিগারেট কিংবা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে কমিটির ধারণা।
ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, মঙ্গলবার বিকালে কমিটির সভাপতি ও নগর সংস্থার অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন প্রতিবেদনটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে দাখিল করেছেন।
গত ৪ এপ্রিল ভোরে দেশে কাপড়ের অন্যতম বড় মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে ডিএসসিসির মালিকানাধীন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিট- বঙ্গবাজার ইউনিট, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগরী ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট ভস্মীভূত হয়ে যায়। এসব মার্কেটে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত ২৯৬১টি দোকান ছিল।
বঙ্গবাজারের পূর্ব পাশে মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের বেশির ভাগ দোকান ভস্মীভূত হয় এবং বাকিগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি জানিয়েছে। বেসরকারি মালিকানাধীন এ মার্কেটের দোকান সংখ্যা ৭৯১টি।
আর উত্তর পশ্চিম কোণের সাততলা এনেক্সকো টাওয়ারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানকার প্রায় সব দোকানের বীমা রয়েছে।
তবে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের সংখ্যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এনেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম কমিটিকে বলেছেন, বীমা থাকায় এই মূহূর্তে তারা ক্ষতিগ্রস্ত তালিকা দাখিল করার চিন্তা করছেন না।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বঙ্গবাজারের পশ্চিম পাশের সড়কের অপর প্রান্তের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের ৫৯ দোকান এবং বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সের ৩৪ দোকান।
বঙ্গবাজারের পোড়া ধ্বংসস্তূপের উপর মানুষ আর মানুষ; কেউ এসেছে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার দেখতে, কেউবা এসেছে নিজের দোকন খুঁজতে, আর কেউ এসেছে পোড়া টিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিতে।
কাঠামোগত ক্ষতি পৌনে ১৫ কোটি টাকা
অগ্নিকাণ্ডে ডিএসসিসি মালিকানাধীন টিন, কাঠ ও লোহার কাঠামোতে তৈরি বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেট ভস্মীভূত হয়, যার আয়তন প্রায় ১ দশমিক ৭৯ একর। তবে ২ শতক জায়গার উপর নির্মিত একটি তিনতলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
কাঠামোগত দিক বিবেচনায় তদন্ত কমিটি বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে।
এনেক্সকো টাওয়ারের ৪ থেকে ৭ তলা পর্যন্ত আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা। মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের বেশির ভাগ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ দেড় কোটি টাকা।
এছাড়া বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা এবং বঙ্গ হোমিও মার্কেটের ক্ষতি ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।
মালামালের ক্ষতি ২৮৮ কোটি টাকা
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ২৯৬১টি দোকানের প্রতিটি ১৭.৫-২০ বর্গফুটের ছিল উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশিরভাগই গেঞ্জির কাপড়, শার্ট, প্যান্ট ও গার্মেন্টস সামগ্রীর দোকান ছিল। ব্যবসায়ীরা কমিটিকে বলেছেন, দোকান ভেদে ৪ থেকে ১৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল।ঢাকার বঙ্গবাজারের পাশের এনেক্সকো টাওয়ারে আগুন নেভার পর বেঁচে যাওয়া কাপড় বস্তাবন্দি করে সরিয়ে নিচ্ছেন দোকানিরা। |
ব্যবসায়ীদের তথ্য ও ব্যয় বিশ্লেষণ করে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটে আনুমানিক ২২২ কোটি টাকার মালামাল আগুনে পুড়ে যায় বলে মনে করছে ডিএসসিসির তদন্ত কমিটি।
মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের মালামালের আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট ও বঙ্গ হোমিও মার্কেটের মালামালের আনুমানিক আর্থিকমূল্য ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, সব মার্কেটের ক্ষেত্রেই প্রতিটি দোকানের মালামালে ক্ষতির পরিমাণ গড়ে সাড়ে ৭ লাখ টাকা করে ধরা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় অন্যদের মধ্যে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন, রমনা রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ মামুনুল হক এবং সংরক্ষিত আসন-৫ এর কাউন্সিলর রোকসানা ইসলাম চামেলী উপস্থিত ছিলেন।
Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy