নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম লেক রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। এ হ্রদের পানির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে দেশের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তবে লেকের পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনও সর্বনিম্নে নেমেছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাঁচটি ইউনিট থেকে ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। অন্য সময় পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলেও পানির অভাবে এখন চারটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। সচল আছে শুধু ১ নম্বর ইউনিট। সেখান থেকে দৈনিক মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, রুলকার্ভ অনুযায়ী বছরের এসময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানি থাকার কথা ৮৭ দশমিক ৮০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল বা গড় সমুদ্র সমতল)। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে পানি আছে ৭৬ ফুট এমএসএল। যেখানে ১১ দশমিক ৮ এমএসএল পানি কম রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদে পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট এমএসএল। পানি ৬৬ এমএসএলের নিচে নেমে গেলে তখন এটি বিপৎসীমা হিসেবে ধরা হয়। ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত কাপ্তাই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন এ হ্রদের ওপর নির্ভরশীল অনেকে। প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবন-জীবিকায়।
কাপ্তাই হ্রদের জেলে শৈবাল দাশ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হ্রদে এমনিতেই আগের মতো পানি সবসময় থাকে না। পানি না থাকায় আমাদের মাছ ধরতেও বেশ কষ্ট পেতে হয়। মাছও আগের মতো পাই না। পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরতে কষ্ট হচ্ছে।’
মৎস্য ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘মে মাস থেকে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ এখনই পানি কমে গেছে। এখন হ্রদে যে পরিমাণ মাছ আছে তাতে পুষিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে।’
বোটচালক শের আলী বলেন, ‘হ্রদে পানি কমতে শুরু করে আরও পরে। কিন্তু এ বছর আগেভাগেই পানি কমে গেছে। পানি কমে যাওয়ায় আমাদের বোট চালাতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় ভাড়া নিয়ে যেতে পারছি না।’
চট্টগ্রাম থেকে এসে রাঙ্গামাটির লংগদু, জুড়াছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে মৌসুমি ফল পাইকারি কিনে চট্টগ্রাম বাজারে নিয়ে যান ব্যবসায়ী গণি মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন তরমুজ ব্যবসার সময়। কিন্তু হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় ফল সংগ্রহ করে রাঙ্গামাটি মূল শহরে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে। বোট ভাড়া ও লেবার খরচ বেশি পড়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের লাভ হচ্ছে কম।’
কলা ব্যবসায়ী ধনপতি চাকমা বলেন, ‘আমার আদাম (গ্রাম) থেকে পায়ে হেঁটে আগে তিন ঘণ্টায় উপজেলা ঘাটে আসা যেতো। সেখান থেকে বোটে রাঙ্গামাটি শহরে কলা নিয়ে আসতাম। এখন লেকের পানি কমে যাওয়ায় আমাদের উপজেলা ঘাট থেকে আরও আধাঘণ্টা পথ হেঁটে বোটে উঠতে হয়। অনেক কষ্ট করে শহরে আসতে হচ্ছে।’
রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত কাপ্তাই বাঁধ। এ বাঁধের ফলে সৃষ্টি হয়েছে কাপ্তাই হ্রদ নামের একটি কৃত্রিম জলাধারা। বাঁধ ও হ্রদটি নির্মাণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন করা। ১৯৬২ সালে বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়।
Posted ১১:০০ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy