নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
দেশের প্রধান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকার হাউজ অ্যাংকর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গ্রাহকদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। এক বিনিয়োগকারীর টাকার অন্য বিনিয়োগকারীকে দেওয়াসহ নিয়মবহির্ভূত অনিয়মের কারণে ঘাটতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
ডিএসইর পরিদর্শনের টিমের তদন্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ২০২০ এবং বিএসইসির ২২ মার্চ ২০২২ এর লঙ্ঘন। এ আইনের দায়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ছয় ধরনের শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএসইসির তথ্য মতে, বুধবার (৫এপ্রিল) পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুসারে ডিএসইর পরিদর্শন টিম তদন্ত করতে অ্যাংকর সিকিউরিটিজে যায়। এসময় পরিদর্শন টিম প্রমাণ পায় যে, পুঁজিবাজারে কর্মরত কিছু ট্রেকহোল্ডারের অনিয়মের কারণে গত ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কনসুলেটেড কাস্টমারর্স অ্যাকাউন্ট (সিসিএ হিসাব) বা গ্রাহকদের বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং সংশ্লিষ্ট ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীতে গ্রাহকদের হিসাবে তহবিলে ঘাটতি রয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৮ টাকা।
এরপর দিন বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) ডিএসই থেকে এ্যাংকর সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ছয় ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুসারে কোনো ব্রোকারেজ হাউজে গ্রাহকদের হিসাবে ঘাটতি থাকলে, প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব হলো স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাতে হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্টক এক্সচেঞ্জকে সে বিষয়ে কিছু জানায়নি। তাতে সিকিউটিজি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস ২০২০ এর ৬ ১ ও ৫ ধারার লঙ্ঘন হয়েছে।
শুধু তাই নয়, গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি করে প্রতিষ্ঠানটি বিএসইসির ২০২২ মার্চের ডিরেক্টিভস লঙ্ঘন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির এ কার্যকলাপের ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থহানি হয়েছে এবং পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে মর্মে কমিশনের নিটক প্রতীয়মান হয়েছে।
ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিদ্যামান সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থার পাশাপাশি দ্যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২০ এর ক্ষমতাবলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ছয় ধরনে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম হলো- ডিএসই রেগুলেশনস, ২০১৩ এর রেগুলেশন ৩ এর অধীনে প্রাপ্য ফ্রি লিমিট সুবিধা স্থগিত করেছে। এতো দিন কোনো ব্রোকার হাউজ কোনো ডিপোজিট ছাড়াই ১০ কোটি টাকা লেনদেন করতে পারত। এখন ওই ফ্রি লিমিট স্থগিত করা হয়েছে। ফলে ব্রোকার হাউজকে প্রথম ৩ কোটির জন্য ৬০ লাখ করে ডিএসইতে জমা রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত ব্রোকার হাউজ হিসেবে যোগ্য বিনিয়োগকারীর হিসেবে আইপিও/ আরপিও এবং কোয়ালিফাইড ইনভেস্টসর অফারে আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এখন আর নতুনে কোম্পানির আইপিও, আরপিও এবং কিউআইওতে আবেদন করতে পারবে না।
তৃতীয়ত,সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি ও ডিপোজিটরি অংশগ্রণকারীর নিবন্ধন সনদ নবায়ন স্থগিত করা হয়েছে।
চতুর্থত নতুন শাখা অথবা ট্রেকহোল্ডার ডিজিটাল বুধ খোলার সুবিধা স্থগিত থাকবে না।
পঞ্চমত, সংশ্লিষ্ট ট্রেকহোল্ডার কোম্পানি কর্তৃক গ্রাহকদের বিনিয়োগকৃত অর্থ সিকিউরটিজের ঘাটতি সমন্বয় করার পর ন্যূনতম এক বছর সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জ উক্ত ট্রেক হোল্ডার কোম্পানিতে বিশেষ তদারকি করে। এছাড়া প্রতিমাসে দুইবার গ্রাহক হিসাবের রক্ষিত সিকিউরিটিজ পরীক্ষা করবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সিদ্ধান্ত অনুসারে উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবে। এছাড়াও ব্রোকার হাউজের ওপর সততা ও বিশ্বস্ততার ধারাও প্রয়োগ করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিএসইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, অ্যাংকর সিকিউরিটিজের ক্যাশ কোডে মাইনাস হওয়ার কারণে ঘাটতি হয়েছে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। তাই অপরাধের শাস্তি হিসেবে প্রাথমিক অবস্থায় ছয় ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকার হাউজে দুই প্রকার বিনিয়োগকারী ব্রোকার হাউজে লেনদেন করেন। এর প্রকার বিনিয়োগকারী হলো শুধু নিজের টাকায় লেনদেন করে। আরেক প্রকার হলো- মার্জিনাল ক্লাইন্ট বা ঋণ নিয়ে লেনদেন করেন। ব্রোকার হাউজ এ বিনিয়োগকারীদের ঋণ দেয়।
এ ব্রোকার হাউজে প্রথম প্রকার বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন বিনিয়োগকারীর বিও অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা আছে। সে হিসেবে তিনি ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনতে পারবেন। কিন্তু তার বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ব্রোকার হাউজ থেকে ১২ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।
এ টাকা কোথা থেকে আসে। এর অর্থ হলো এখানে ঘাটতি ২ লাখ, অর্থাৎ নগদ টাকা লেনদেনে করে ঘাটতি রয়েছে। যা কখনো ব্রোকার হাউজ কর্তৃপক্ষ করতে পারে না। এরকম অনেক ঘাটতি রয়েছে ব্রোকার হাউজ থেকে।
এভাবেই কিছু বিনিয়োগকারীকে বিও হিসাবে টাকা না থাকার পরও শেয়ার কিনে দিয়েছে। নিয়ম অনুসারে একজনের আরেক জনের টাকায় ব্যবসায় করতে পারেন না। টাকা আমার সে শেয়ার কিনবেন আপনি এটাতো হবে না। তবে এ বিনিয়োগকারীকে যদি ব্রোকার হাউজ থেকে টাকা দিয়ে শেয়ার কিনে দিতো তাহলে ঠিক ছিল। অথবা যার কাছ থেকে শেয়ার কিনেছেন তাকে ৫ দিন পর দিচ্ছেন তাহলে ঠিক ছিল। এভাবে ঘাটতি শুরু হয়েছে।
বিএসইসির একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, একজনের টাকায় আরেক জনের শেয়ার কিনে দিয়ে একজনের হক নষ্ট করে হাউজগুলো। পরবর্তী পর্যায়ে বাজার যদি ভালো হয় তবে, ওরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা দিয়ে। দেয় কিন্তু বাজার যদি খারাপ হয় তাহলে আর বিক্রি করতে পারে না।
অর্থাৎ যার টাকা দিয়ে শেয়ার কিনে দেওয়া হলো তিনি বঞ্চিত হলেন। আর যিনি শেয়ার কিনলেন তিনি আর আসলেন না। ঘাপলা হয় দুইদিক থেকেই। ফলে গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি।
এবিষয়ে এ্যাংকর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সাইফুল ইসলাম বলেন, যে টাকার শটফল ডিএসই পেয়েছে সেটি অন্য একটি অ্যাকাউন্টে জমা ছিল। রোববার ডিএসই ও বিএসইসির কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে দেবো।
তিনি বলেন, গ্রাহকদের টাকা সরানো হয়নি, এখানে ডিপি অ্যাকাউন্টের মুনাফার টাকা ছিল। এ টাকা বিতরণের সফটওয়্যার এখানে নেই। আমাদের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট না থাকায় অন্য অ্যাকাউন্টে তা রাখা হয়েছে।
Posted ৫:৫৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy