নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক ঋণের আবশ্যকতা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে একটি দেশ যখন তার উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তখন ঋণের আবশ্যকতা আছে। কিন্তু তাই বলে দীর্ঘ মেয়াদে একটি দেশ ঋণগ্রস্থ হয়ে থাকতে পারে না। এটা একটি দেশের জন্য মর্যাদাহানীকর। তাই প্রতিটি দেশই চেষ্টা করে কিভাবে বৈদেশিক ঋণ মুক্ত থাকা যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণদানের জন্য উদগ্রীব হয়ে বসে থাকে। কারণ তারা যদি এসব দেশে ঋণ দিতে না পারে তাহলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঋণদানের নামে কার্যত দরিদ্র দেশগুলোকে পুঁজিবাদি বিশ্বের শোষণের আখড়ায় পরিণত করে। একটি দেশ ঋণ গ্রহণ করবে। সেই ঋণের অর্থ সুদ সমেত ফেরত দেবে। এর মাঝখানে আর কোনো প্রদিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়। কিন্তু দেখা যায়, বিভিন্ন দেশকে ঋণদানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সংস্থাগুলো নানা ধরনের শর্ত দিয়ে থাকে। ঋণ পেতে হলে এসব শর্ত গ্রহীতা দেশকে মেনে নিতেই হবে। এসব শর্তের কোনো কোনোটি অত্যন্ত আপত্তিকর এবং গ্রহীতা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। ঋণ দানের ক্ষেত্রে শর্ত দেবার বেলায় আইএমএফ’র কোনো জুড়ি নেই। তারা বিভিন্ন দেশকে ঋণদানের সময় এমন সব শর্ত দিয়ে থাকে যা অত্যন্ত আপত্তিকর। তারপরও এসব শর্ত তাদের মেনে নিতে হয়। কারণ ঋণের অর্থ দেশগুলোর খুবই প্রয়োজন। কোনো দেশ একান্ত বিপদে না পড়লে আইএমএফ’র নিকট থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২ বার আইএমএফ’র নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে। গত ১০/১২ বছর বাংলাদেশ আইএমএফ’র নিকট থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেনি। ফলে তাদের দেয়া পরামর্শ নামক শর্ত মেনে নিতে হয় নি। সম্প্রতি বাংলাদেশ আইএমএফ’র নিকট থেকে ৪ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। এই ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে অন্তত ৩৮টি বিভিন্ন ধরনের শর্ত মেনে নিতে হচ্ছে। এসব শর্তের অধিকাংশই সরকারের অর্থনৈতিক নীতির পরিপন্থী। তারপরও ঋণ নিতে হচ্ছে। গত এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। ফলে সর্বসাকল্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৭৯ কোটি মার্কিন ডলার। বিপুল পরিমাণ ঋণের মধ্যে ৭৪ শতাংশই সরকারিভাবে গৃহীত ঋণ। বাংলাদেশ যে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করেছে তা এখনো সীমার মধ্যেই রয়েছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ একটি দেশের জন্য উদ্বেগজনক নয় বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ তার মধ্যেই রয়েছে। ঋণ গ্রহণ খারাপ নয়। কিন্তু গৃহীত ঋণের অর্থ কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাই বড় কথা।
Posted ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy