নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে তার এই সংস্থার পক্ষ থেকে ‘চোখ-কান খোলা রাখবেন। বিশেষ করে যারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তাদের হলফনামায় উল্লেখিত সম্পদ,দায় দেনাসহ ঘোষিত তথ্যাদির প্রতি নজরদারি করা হবে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখা হবে। দুদক সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজের গতি আরও বাড়ানোর চেষ্ঠা চলছে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারি নাই। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি।’
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন, পরিচালক গোয়েন্দা ইউনিট, আবদুল্লাহ আল জাহিদ। এছাড়া দুদক জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ সাদেক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ প্রমুখ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে গত ২০ মার্চ রাতে হস্তান্তরের বিষয়টি উল্লেখ করেন দুদক সচিব। প্রতিবেদনে দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি দুদকের চেয়ারম্যানকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন।’ দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করেঝেন চেয়ারম্যান।
দুদকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ জমা পড়ে। এসব অভিযোগ যাচাই শেষে ৯০১টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্যে নেওয়া হয়। দুদকের তফসিলভুক্ত নয়, এমন ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ২০২১ সালে দুদকে ১৪ হাজার ৭৮৯টি অভিযোগের মধ্যে ৫৩৩ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়। আর দুই হাজার ৮৮৯টি অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। দুদকের ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি। ২০২২ সালে ৩৪৬টি দুর্নীতি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেশের ২৯টি বিশেষ জজ আদালতে দুদকের পক্ষে ১২০ জন আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেন। ২০২২ সালে সারাদেশে আদালতে তিন হাজার ৩২৬টি বিচারাধীন মামলা ছিল। এর মধ্যে ৪১৯টি মামলার বিচারকার্য উচ্চ আদালতের আদেশে স্থগিত থাকায় বাকি দুই হাজার ৯১০টি মামলার বিচারকাজ চলমান ছিল।এসব মামলার মধ্যে ২০২২ সালে কমিশন আমলের ৩০৭টি এবং ব্যুরো আমলের ৩৯টিসহ মোট ৩৪৬টি নিষ্পত্তি হয়। নিষ্পত্তিকৃত মামলার মধ্যে কমিশন আমলের ১৯৭টি এবং ব্যুরো আমলের ১৪টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। আর কমিশনের আমলের ১১০টি এবং ১৫টি মামলায় আসামিরা খালাস পেয়েছেন।
দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
তিনি বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার।
দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদনটি সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত। এখানে কোনো আবেগ ও অতিরঞ্জিত কিছু নাই। দুদক আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী, ভেতরে ও বাহিরে এর কার্যকর ক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
দুদকের কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে মানুষের আস্থা বাড়ার প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে বেড়েছে। দুদকের কার্যক্রমে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দুদক কী কাজ করেছে, রেকর্ড-পত্রেই তার প্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রকে অর্থ আদায় করে দেওয়ার মতো ভালো কাজ করেছে দুদক। কাউকে জেল খাটানোর চেয়ে জরিমানা আদায় করা লাভজনক। দুদক সেই কাজটিই করছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
/কাশেম
Posted ৮:১৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy