নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান, সদস্য (নন-লাইফ) নজরুল ইসলাম, সদস্য (আইন) দলিল উদ্দিন, সাবেক সদস্য (প্রশাসন) মইনুল ইসলামসহ সংস্থাটির অন্তত আটজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
কেলেঙ্কারি নিয়ে পদচ্যুত সোনালী লাইফের বিতর্কিত সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদ বিন আমানের বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ডে সহযোগিতা করে ওই কর্মকর্তারা এসব সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সোনালী লাইফ থেকে অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধাভোগী আইডিআরএ’র অন্য কর্মকর্তাদের তালিকায় রয়েছেন সহকারী পরিচালক মোঃ আবু মাহমুদ, সাবেক পরিচালক মো. শাহ আলম ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ।
ঈদুল আজহার উপহার, সোনালী লাইফের বিভিন্ন বিষয় অনুমোদন বাবদ অবৈধভাবে এসব অর্থ তাদেরকে দেয়া হয় বলে কোম্পানিটিতে সংরক্ষিত ভাউচারে উল্লেখ রয়েছে।
এরমধ্যে সদস্য (নন-লাইফ) নজরুল ইসলাম (ল্যান্ড অ্যাপ্রুভাল বাবদ) গাড়ি কেনার জন্য পেটি ক্যাশ হিসেবে এক ভাউচারেই নিয়েছেন ১৫ লক্ষ টাকা। সহকারী পরিচালক মো. আবু মাহমুদ কিউএসআইপি ভ্যালুয়েশন অ্যাপ্রুভাল বাবদ এক ভাউচারে নিয়েছেন পাঁচ লক্ষ টাকা। পরিচালক মো. শাহ আলম ঈদুল আজহার উপহার বাবদ এক ভাউচারেই পেটি ক্যাশ হিসেবে নিয়েছেন তিন লক্ষ টাকা। আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান জয়নুল বারী শুধুমাত্র ঈদ উপহার বাবদই দুই লক্ষ, তিন লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন দফায় দফায়।
এরমধ্যে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই অনুমোদিত ২৩০৭১৯১৮২১১৮০৭১৪৭৫ নাম্বারের একটি ক্যাশ ভাউচারে দেখা যায়, পেটি ক্যাশ হিসেবে আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ আট কর্মকর্তাকে সাড়ে সাত লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে। ঈদুল আজহা -২০২৩ এর ঈদ উপহার হিসেবে এই অর্থ তাদেরকে প্রদান করা হয় বলে ভাউচারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবরণ অনুযায়ী, ওই ভাউচারের সাড়ে সাত লক্ষ টাকা থেকে আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যানকে দুই লক্ষ টাকা, সহকারী পরিচালক মো. আবু মাহমুদকে এক লক্ষ টাকা, তৎকালীন পরিচালক মো. শাহ আলমকে এক লক্ষ টাকা, তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদকে ৫০ হাজার টাকা, তৎকালীন সদস্য (প্রশাসন) মইনুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা, সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসানকে এক লক্ষ টাকা, সদস্য (নন-লাইফ) নজরুল ইসলামকে এক লক্ষ টাকা, সদস্য (আইন) দলিল উদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
২০২৩ সালের ২২ জুন অনুমোদিত ২৩০৬২২১৮৮৭১৪২৬১৯০১ নাম্বারের একটি ক্যাশ ভাউচারে দেখা যায়, পেটি ক্যাশ হিসেবে আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ঈদুল আজহার উপহার বাবদ তিন লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। রেজাউল করিম নামে একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এই টাকা দেয়া হয়েছে বলে ভাউচারের বর্ণনা অংশে উল্লেখ রয়েছে।
আরেকটি ভাউচারে দেখা যায়, এর দুই মাস আগে ঈদ সম্মানি বাবদ আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান জয়নুল বারীকে আরো তিন লক্ষ টাকা দিয়েছে সোনালী লাইফ। ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল পেটি ক্যাশ হিসেবে অনুমোদিত ২৩০৪১৫১ ১৮০১৩০৪১১৬২ নাম্বারের ওই ভাউচারেও রেজাউল করিম নামে একজন ব্যক্তির মাধ্যমে এই টাকা দেয়া হয়েছে বলে বর্ণনা অংশে উল্লেখ রয়েছে। ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল অনুমোদিত একটি ভাউচারের মাধ্যমে সোনালী লাইফ থেকে আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান জয়নুল বারীসহ আট কর্মকর্তাকে সাত লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। ২৩০৪ ১৮১ ৫১৫১৬৩৮১৯৬৯ নাম্বারের ওই ভাউচারের তথ্যানুযায়ী, ঈদ সম্মানী বাবদ আইডিআরএ’র তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী, সদস্য (লাইফ) কামরুল হাসান, সদস্য (নন-লাইফ) নজরুল ইসলাম, সদস্য (আইন) দলিল উদ্দিন, সদস্য (প্রশাসন) মইনুল ইসলাম, আইডিআরএ’র সহকারী পরিচালক মো. আবু মাহমুদ, পরিচালক মো. শাহ আলম ও নির্বাহী পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদকে এই টাকা দেয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৩ জুলাই অনুমোদিত ২৩০৭২৩১১৫৯১৩৬৬১০০৮ নাম্বারের একটি ক্যাশ ভাউচারের মাধ্যমে আইডিআরএ’র তৎকালীন সদস্য (নন-লাইফ) নজরুল ইসলামকে পেটি ক্যাশ হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকা দেয় সোনালী লাইফ। ল্যান্ড অ্যাপ্রুভাল বাবদ নজরুল ইসলামের গাড়ি কেনার জন্য এই টাকা দেয়া হয়েছে বলে ভাউচারের বর্ণনা অংশে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৩ সালের ২৬ জুন অনুমোদিত ২৩০৬২৬ ১৬৭৪১২৫২১১৭২ নাম্বারের একটি ভাউচারের মাধ্যমে আইডিআরএ’র তৎকালীন পরিচালক মোঃ শাহ আলমকে ঈদুল আজহার উপহার বাবদ তিন লক্ষ টাকা প্রদান করে সোনালী লাইফ। একই তারিখে আনোয়ার হোসেন নামে একজন ব্যক্তি ইস্টার্ন ব্যাংকের খিলগাঁও শাখায় শাহ আলমের ১০১১৪৪০০০০৩৭১ হিসাবে ওই টাকা জমা করে। ২০২৩ সালের ২৬ জুন অনুমোদিত আরেকটি ভাউচারে দেখা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইডিআরএ’র কর্মকর্তাদের উপহারের শাড়ি ক্রয় বাবদ আড়ংয়ের মগবাজার আউটলেটে সোনালী লাইফের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়েছে এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই শাড়ীর ক্রেতা ছিলেন সুমি সেন।
২০২৩ সালের ২৩ জুলাই অনুমোদিত ২৩০৭২৩ ১২৪১১ ৯৯৫১৬১৮ নাম্বারের একটি ভাউচারের মাধ্যমে আইডিআরএ’র সহকারী পরিচালক মোঃ আবু মাহমুদকে পেটি ক্যাশ হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদান করে সোনালী লাইফ। ভাউচারের বর্ণনা অংশে বলা হয়, কিউএসআইপি ভ্যালুয়েশন অ্যাপ্রুভাল বাবদ মাহমুদকে এই টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল অনুমোদিত ২৩০৪১৭ ১৬৬ ০১৯৪৩১০৪৭ নাম্বারের একটি ভাউচারের মাধ্যমে টিংকু নামে এক ব্যক্তিকে ঈদ বোনাস বাবদ ২০ লাখ টাকা প্রদান করে সোনালী লাইফ। যার বর্ণনা অংশে এই টাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকের ৭১৪৩৯৭৩ নম্বর চেকের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
Posted ২:০৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy