নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৩ হাজার কোটি টাকার সভরেন গ্যারান্টি দিয়েছে সরকার। এ ঋণ গ্যারান্টি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য যে কোনো ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে আইসিবি।
রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবি মূলত পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিয়ে থাকে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে সংকট কাটাতে সহযোগিতা করে। এ ঋণ পাওয়ার ফলে পুঁজিবাজারে তারল্য সহায়তা দিতে সক্ষম হবে আইসিবি। ফলে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সভরেন গ্যারান্টির অর্থ হচ্ছে, এ ঋণের বিপরীতে রাষ্ট্র গ্যারান্টার হিসেবে থাকবে।
সভরেন গ্যারান্টির বিষয়ে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই টাকাটা প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি নয়। পুঁজিবাজার আগের সরকারের সময়ে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে সময় অন্যান্য ব্যাংকের মতো আইসিবিতেও এক ধরনের লুট হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ এনে আইসিবি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যে টাকা ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে। তবে এর অনুপাত এখনো নির্ধারিত হয়নি।’
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আইসিবির ফান্ড প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কমিশনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এই ফান্ড পেলে আইসিবির আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। ঋণগুলো পরিশোধের পাশাপাশি কিছু ফান্ড নতুন করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে বাজারে তারল্য এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারল্য সংকট কাটাতে সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়ে আসছিল আইসিবি। তবে আর্থিক সংকটের কারণে সরাসরি ঋণ দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কয়েক দফায় চিঠি চালাচালিও হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সে ঋণ আর অনুমোদন হয়নি।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার সব খাতে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। বিএসইসি, ডিএসই ও আইসিবি থেকে শুরু করে আর্থিক খাতের প্রায় সব সংস্থার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে। তবে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের কিছু সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। এমন অবস্থায় বিএসইসিও ব্যাপক সংস্কার কাজ শুরু করে। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে জানতে বিএসইসিতে উপস্থিত হলে পুঁজিবাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মূলধনি মুনাফা করহার কমিয়ে অর্ধেক করে দিলে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়।
এরপর নতুন করে আলোচনায় আসে আইসিবির ঋণের বিষয়টি। এ নিয়ে গত ১৭ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টার কাছে সেই প্রস্তাবনা রেজ্যুলেশন আকারে তুলে ধরে এফআইডি। পরে তা গত মঙ্গলবার অনুমোদন পেয়েছে।
এদিকে ২০২২ সালের জুলাইয়ে ফ্লোর প্রাইস ব্যবস্থা চালুর প্রায় দুই বছর পর জানুয়ারিতে তা প্রত্যাহার হয়। এর পরই বাজার মূলধন প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কমে যায়। ফ্লোর প্রাইস হলো কোনো স্টক বেচাকেনার সর্বনিম্ন মূল্য। আর শেয়ার নির্ধারিত ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারে না। বাজারের অস্থিরতা রোধের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিএসইসি গত ২৪ এপ্রিল তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না বলে আদেশ দেয়।
অস্থিতিশীল বাজারের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আইসিবি ২৬৭ কোটি টাকা লোকসান করেছে। এটির মূলধন লাভ ৫৯ শতাংশ কমে ১০৫ কোটি টাকা হয়েছে। এ ছাড়া আমানত ও ঋণের সুদ পরিশোধ ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ৬৭৫ কোটি টাকা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিনিয়োগ ব্যাংকটির মুনাফা ৪৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৭৭ কোটি টাকা হয়। এ ছাড়া ফ্লোর প্রাইস সীমাবদ্ধতার মধ্যে শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় আইসিবি এটির আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
Posted ১:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy