নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট
সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়া নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চলছে বলে জানিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, অযথাই পানি ঘোলা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার সেন্টমার্টিন এবং পর্যটন শিল্পকে একসাথে রক্ষা করতে চায়।
সোমবার বিশ্ব ‘ওয়ান হেলথ ডে ২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, একটা গোষ্ঠী আছে, আপনি যেটাই করবেন সেটা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা করবে। সে চেষ্টা তো আছেই। এখন প্রশ্ন হলো আপনারা কি সেন্টমার্টিন বাঁচাবেন নাকি পর্যটন বাঁচাবেন। এখন যেভাবে সেন্টমার্টিনে পর্যটন চলছে সেটাকে পর্যটন বলা যায় না। সেন্টমার্টিনের ৪১ শতাংশ কোরাল ক্ষয় হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে বলা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫ সালের মধ্যে সব কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ডুবে যাবে। তখন পর্যটনটা থাকবে কোথায়?
উপদেষ্টা বলেন, সুতরাং সেন্টমার্টিন ও পর্যটন দুটোকেই আমাদের বাঁচাতে হবে।
এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো অবকাশ নেই। আমরা পর্যটন নিষেধ করিনি। সেন্টমার্টিনে নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরতে হবে। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে দৈনিক সর্বোচ্চ ২ হাজার পর্যটক রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
এর আগে ‘ওয়ান হেলথ ডে ২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ উপদেষ্টা জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রকৃতি, প্রাণীজগত এবং পরিবেশের সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় মানবজাতির দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত জরুরি। বন্যপ্রাণী নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে বা লড়াই করতে পারে না; তাই তাদের অধিকার ও প্রকৃতির অধিকার রক্ষা আমাদের দায়িত্ব। প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই আমাদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগ হতে মুক্ত রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য ধারণা একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি, যা মানবস্বাস্থ্য, প্রাণীস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত সুস্থতার অভিন্ন সংযোগকে চিহ্নিত করে। তাই এদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণকে যুক্ত করতে হবে। এক স্বাস্থ্য ধারণার ওপর বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসময় তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এক স্বাস্থ্য মডেল কার্যকর করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই লক্ষ্য অর্জনে সম্মিলিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারিদা আখতার বলেন, ওয়ান হেলথ এর মধ্যে শুধু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থাকলেই হবেনা এখানে কৃষি, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য বিভাগকে আওতাভূক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কৃষিতে পেস্টিসাইড, হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে দেশের উৎপাদিত কৃষিপণ্য মানুষ ও প্রাণী স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমরা খাদ্য দ্রব্যের উৎপাদন বাড়িয়েছি কিন্তু নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্বারোপ করি নাই। ওয়ান হেলথ এপ্রোচের মাধ্যমে মানুষ, প্রাণী ও কৃষি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা হলে মানবস্বাস্থ্য রক্ষা হবে।
এতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম. এ. আকমল হোসেন আজাদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মেডিকেল শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মো. আবু জাফর, বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ডা. রাজেশ নারওয়াল, বাংলাদেশে এফএও’র প্রতিনিধি ঝিয়াওকুন শি, বাংলাদেশে ইউএসএইডের মিশন পরিচালক রিড জে. আইশলিম্যান, ওয়ান হেলথ বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক প্রফেসর ডা. নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ এবং ওয়ান হেলথ সেক্রেটারিয়েট সমন্বয় কমিটির চেয়ার প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
Posted ৩:৪২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy