নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১২ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট
বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম পদত্যাগের দাবিতে আজও বিক্ষোভে উত্তাল এনবিআর। দাবি না মানলে বুধবার (১৪ আগস্ট) থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা এসেছে।
আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদত্যাগ করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
সোমবার (১২ আগস্ট) এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠনে সম্পৃক্ততা রয়েছে। আমাদের একটাই দাবি বর্তমান চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত কিংবা পদত্যাগ করতে হবে। তিনি আমাদের সঙ্গে অনেক অন্যায় ও অবিচার করেছেন। এনবিআরে বাইরের কোনও ক্যাডার থেকে কোনও চেয়ারম্যান আমরা আর চাই না। কাস্টমস বা ট্যাক্স বিভাগের সদস্যদের মধ্য থেকে নতুন এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হোক।
এদিন এনবিআরের সামনে যৌথভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এসময় বাংলাদেশ ইন্সপেক্টর অব ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম আকাশ এবং বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি মো. মজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআরের কর্মচারীরা বলছেন, আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কেন বাইরের ক্যাডার নিয়ে এসে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে? আমাদের শুল্ক, আবগারি ক্যাডার থেকে ২ বছরের জন্য ও ইনকাম ট্যাক্স ক্যাডার থেকে ২ বছরের জন্য মেম্বারদের চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলে কী সমস্যা? আমাদের কষ্ট তারা বুঝতে পারবেন। বাইরের ক্যাডারের কর্মকর্তারা আমাদের কষ্ট বুঝতে চান না। তাদের ইচ্ছেমতো করে আমাদের চালাতে চান, সেটা কতটা যৌক্তিক তা ভেবে দেখার এটাই উপযুক্ত সময়। আমাদের প্রমোশন হওয়ার কথা ছিল সিরিয়াল মোতাবেক, অতীতেও হয়েছে। চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন লোকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ইচ্ছেমতো যাকে তাকে সামান্য অজুহাতে সিরিয়াল ভঙ্গ করে নিজের পছন্দ মতো করে প্রমোশন ও বদলি হয়েছে। সময়মতো পদোন্নতি দেওয়া হয়নি, ডিপিসি করা হচ্ছে না, পদোন্নতির পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না, নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। আমরা যারা এই বৈষম্যের শিকার হয়েছি।
কর্মচারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে –
১। প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনও কর্মকর্তা প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন করা যাবে না।
২। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে অবিলম্বে পদ থেকে বরখাস্ত করে আয়কর/কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।
৩। অবিলম্বে চেয়ারম্যানের অনুসারী এবং প্রিয়পাত্র প্রথম সচিব (কর প্রশাসন) মো. শাহিদুজ্জামানকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে কর ক্যাডারের কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে।
৪। দুই বছর পর পর বদলি বাণিজ্য বন্ধ করে আয়কর আইন-২০২৩ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং আয়কর আদায়ের স্বার্থে অতীতের মতো রাজস্ব বান্ধব এবং প্রযোজ্যতা সাপেক্ষে বদলি করতে হবে।
৫। অবৈধ নিয়োগ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
৬। সব কর্মচারীদের পদায়ন কর্মচারীদের জন্য প্রণীত জ্যেষ্ঠতা বিধিমালা ও আইন অনুযায়ী করতে হবে।
৭। আয়কর অনুবিভাগের ১০তম-২০তম গ্রেডের সব শূন্য পদে পদোন্নতি দিতে হবে এবং সব পদ পদোন্নতিযোগ্য হতে হবে, কোনও পদ ব্লক রাখা যাবে না।
৮। কর্মচারীদের নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মচারীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় কোনও সিদ্ধান্ত মানা হবে না।
৯। সর্বশেষে আয়কর অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত শুধু আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নেবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্ত ও শাস্তির দাবিতে গত ৬ আগস্ট থেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। বিক্ষোভে চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে আইনের আওতায় শাস্তি দাবি করেছেন কর্মচারীরা।
Posted ৪:৪০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ আগস্ট ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy