নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট
স্মার্ট বাংলাদেশ ও ক্যাশলেস অর্থনীতি বিনির্মাণে ডিজিটাল হচ্ছে আর্থিক সেবা। আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করেছে ব্যাংকগুলো। এতে বিপত্তিতে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ, দেশে বড় কোনো আন্দোলন হলেই ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে ইন্টারনেটনির্ভর ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিপাকে পড়েন গ্রাহক। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাত।
এমন পরিস্থিতিতে বিকল্প মাধ্যম খুঁজছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যে মাধ্যমে ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা যায়।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এক বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ঘিরে দেশে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। হতাহত হন আনেকে। যার প্রতিবাদে গত ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাট-ডাউন’ ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে ইন্টারনেট সেবা সীমিত এবং রাতে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় সরকার।
১৮ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ব্যাংকের সব ধরনের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থার পুনরাবৃত্তি হলে কীভাবে চলবে ব্যাংকিং কার্যক্রম? বিষয়টি মাথায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা চালুর চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগ। ইতোমধ্যে তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা প্রস্তুত করেছে। যা দ্রুত সময়ের মধ্যে গভর্নরের কাছে পেশ করা হবে। এরপরই সরকারের মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, সাধারণত আন্দোলন শুরু হলে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে। এর মাধ্যমে সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করতে চায়। কিন্তু আমাদের সব ধরনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা একই ধারায় চলায় আমাদেরও পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে কাজ শুরু করেছি।
তথ্য বলছে, দেশে ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমন বা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট সেবা বিশেষত মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ছাড়া সাময়িকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়। ২০২৩ সালে বিরোধী দলের আন্দোলন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে আন্দোলন এবং ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন দমনেও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়।
নিউইয়র্কভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান অ্যাকসেস নাউ গত মে মাসে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা তথা ইন্টারনেট শাট-ডাউন নিয়ে একটি ডেটাবেজ প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে তিনবার বন্ধ করা হয় ইন্টারনেট সেবা। ওই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম। ২০২২ সালে যা ছিল পঞ্চম। ওই বছর দেশে ছয়বার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালে দুবার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংক এমডিদের বৈঠক শেষে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বিকল্প নিয়েও চিন্তা করতে হবে। উন্নত দেশ হওয়ার আগেই ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলোর জন্য আমাদের আলাদা সার্ভিস লাইন থাকা প্রয়োজন। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ব্যাংক একই লাইনে চলবে, এটা তো হওয়ার কথা নয়। আমাদের এমন লাইন করা দরকার যেন ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যাংকের কার্যক্রম চলে। সেক্ষেত্রে ব্যাংকের জন্য আলাদা ব্রডব্যান্ড লাইনের মতো লাইন গড়ে তোলার দরকার।’
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, ‘ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে আমাদের কিছু এটিএম ছাড়া অনেক সেবা বন্ধ ছিল। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখনই আমাদের বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের ম্যানুয়ালি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানো যায় কি না, সেটা নিয়েও চিন্তা করা দরকার।’
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy