নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আরও বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাজারে বর্তমানে বাংলাদেশ তাদের সক্ষমতার মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহার করছে। বাকি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ইইউর বাজারে বছরে আরও ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার রপ্তানি করা যাবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার ‘ইইউ-বাংলাদেশ অংশীদারত্বের পঞ্চাশ বছর: সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া’ শীর্ষক এই গবেষণাপত্রের উপস্থাপনা ও এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
র্যাপিড এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সেমিনারে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিশেষত ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে জিএসপি–সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের এখনই উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সেমিনারে গবেষণাপত্রের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। সেখানে তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারে এখন যে রপ্তানি হয়, তার থেকে বছরে আরও ৪০ শতাংশ রপ্তানি বেশি করা সম্ভব। তাতে অতিরিক্ত ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয় করা যাবে। উৎপাদনে বৈচিত্র্য এনে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো গেলে শুধু তৈরি পোশাক খাত থেকেই ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় আসবে।
বিগত দশকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির হিস্যা ক্রমাগতভাবে বেড়েছে উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, ইইউতে বাংলাদেশের বাজার ৯ থেকে ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। ইইউর বাজারের আকার বৈশ্বিক আমদানির ৩০ শতাংশের সমান। তাই বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন আব্দুর রাজ্জাক।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়নে ইইউর অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার, রপ্তানিবৈচিত্র্য বাড়ানো ও সেবা রপ্তানির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলি উভয়ের মধ্যে বিনিয়োগ-বাণিজ্য বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ চান।
অনুষ্ঠানে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান করোনা সংকট–পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় ইইউ বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি সুবিধা ২০২৯–এর পর আরও তিন বছর বাড়ানোর আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ বলেন, ‘ইইউ-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার অনেক সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ইইউর বাজারে রপ্তানিবৈচিত্র্যকরণের ব্যাপারে এখনই উদ্যোগ না নিলে সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার। যেখানে ইইউর দেশগুলোতে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য। ইইউর ২৭টি দেশ বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৫ শতাংশ এবং পোশাক রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি দখল করে আছে।
রপ্তানির পাশাপাশি ইইউ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ইইউর বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে ২৩০ কোটি ডলার উন্নয়ন সহায়তা পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ইমতিয়াজ আহমেদ, অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ প্রমুখ।
Posted ১১:০২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy