নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৫ মে ২০২৪ | প্রিন্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে বলেছেন, ঢাকাবাসী যাতে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে, সেজন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
শনিবার (২৫ মে) চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। এই প্রকল্পগুলো নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।’
প্রকল্পগুলো হচ্ছে— বঙ্গবাজারে ‘বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপনী বিতান’, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত আট সারির ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি সরণি’, ধানমন্ডি লেকে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ শীর্ষক চারটি উন্নয়ন প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ধিত ঢাকার জনগণ যেন যথাযথ সেবা পেতে পারে সেজন্য নগরীকে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই দুটি অংশে ভাগ করেন। যে গুলো ইউনিয়ন ছিল, সেগুলোকেও সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে তার সরকার আবাসিক ফ্ল্যাট ও সম্মানজনক পদবীর ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তাই ছিল না। তার সরকার সেসব রাস্তা, ওভারপাস, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বাঁধের ওপর রাস্তা, বুড়িগঙ্গা বেড়িবাঁধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, যে গুলো বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।
তিনি বলেন, আন্তঃজেলা যোগাযোগ সহজ করতে আমরা ঢাকায় একটি রিং রোড নির্মাণ করতে চাই।
সরকার প্রধান বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এখান থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জ নেওয়া হয়েছে। পুরাতন কেন্দ্রীয় কারগারে যেখানে জাতির পিতা দীর্ঘদিন বিভিন্ন সময় বন্দি ছিলেন, যেখানে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ফাঁসির মঞ্চ— যেখানে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার সৈনিক, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফাঁসি দিয়েছিল। আর ব্রিটিশ আমল থেকেই অনেক দেশপ্রেমিককে সেখানে ফাাঁসি দেওয়া হয়— সেই জায়াগাটিসহ সব স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে স্কুল এবং পার্ক করে সৌন্দর্যবর্ধন এবং বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন,‘ঠিক একইভাবেই এই এলাকার মানুষ যাতে ভালভাবে থাকতে পারে সেই ব্যবস্থাও করেছি।
শেখ হাসিনা বঙ্গবাজার পুনর্নিমাণের পর ব্যবসা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এরআগে তিনি মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজার বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের পর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকার সঙ্গে তার একটা আলাদা নাড়ির টান রয়েছে। কাজেই এই অঞ্চলের মানুষরা ভালো থাকুক সেটাই তার লক্ষ্য।
অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হন। তার পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ঢাকায় এসে প্রথমেই তারা ৮/৩ রজনীবোস লেনের একটি বাড়িতে ওঠেন। এরপর বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হলে মিন্টু রোডে চলে আসেন। ৯২ এর ‘ক’ ধারায় জরুরি আইন জারি করা হলে ১৪ দিনের নোটিশে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ৭৯ নম্বর নাজিরা বাজারে অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ফুপুর বাড়িতে তারা দীর্ঘদিন ছিলেন। মাঝে বন্যা হলে আরমানিটোলার বাঘওয়ালা বাড়িতেও (স্থানীয়রা বলতো) ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার জন্ম ঢাকার মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর ছোট ভাই শেখ রাসেলের জন্ম ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে।
সরকার প্রধান বলেন, মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের শুরুটা যেন চানখারপুল থেকে হতে পারে, সরকারে আসার পর তিনিই তার ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আজ যে প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো, সেগুলো বাস্তবায়ন হলেও এলাকার মানুষই লাভবান হবে। তারা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারবে, চলতে পারবে।
তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বলেন, এটি একটি প্রাইমারি স্কুল ছিল। পরে উচ্চমাধ্যমিক স্কুল এবং সেখান থেকে কলেজ হয়। আর এখন বিশ্ববিদ্যালয়। এতটুকু জায়গা, বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো ছিটানো হোস্টেল। এগুলো সব একত্রিত করে একটি ভাললো ক্যাম্পাস এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত করে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আবাসস্থল নির্মাণ করে শিক্ষার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে তার সরকার। ইতোমধ্যে জায়গা ও নকশা করা হয়ে গেছে। সেকাজও শিগগির শুরু হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সেভাবে নতুন ক্যাম্পাস আমরা করে দেবো— যাতে একটা সুস্থ পরিবেশে ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে।
সরকার প্রধান বলেন, ইতোমধ্যে তার সরকার ঢাকার মানুষের যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে। এক সময় বিদ্যুত থাকতো না, পানিও থাকতো না। আপনাদের মনে আছে, সেই বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে মানুষের আন্দোলনে বিএনপি’র এক নেতা (স্থানীয় এমপি) জনগণের ধাওয়াও খেয়েছিল। কিন্তু তার সরকার ঢাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করেছে। সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং মানুষের বিদুতের ব্যাহারও বেড়েছে। তিনি এই সময় নিজ নিজ পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার রাখাসহ বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশার উপদ্রব থেকে বাাঁচার জন্য পানি জমে থাকা জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানির ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি এই সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও সবার সহযোগিতা চান। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা না ফেলে নিদিষ্টি জায়গায় ফেলার এবং সিটি করপোরেশনকেও তিনি দ্রুত এগুলো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এই সময় তিনি আসন্ন কোরবানির ঈদে যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না দেওয়ার জন্যও নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে শুধু সিটি করপোরেশনে নয়, সমগ্র বাংলাদেশেই তার নির্দেশ রয়েছে— প্রত্যেক জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার।
তার সরকার ঢাকা শহরের জলাধারগুলো উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে যত্রতত্র পুকুর-খাল, জলাশয় ভরাট করে স্থাপনা তৈরি না করার জন্য নগর পরিকল্পনাবিদদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেন। অতীতের সরকারগুলো পুকুর, খাল-বিল ভরাট করে স্থাপনা বা বক্স কালভার্ট নির্মাণ করায় খাল-বিল-পুকুরে ভরা ঢাকা শহরের বাতাসও এখন ভারী হয়ে উঠেছে, পানি সরার কোনও জায়গা থাকছে না।
তিনি সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদক থেকে সবাইকে দূরে থাকার এবং সিটি করপোরেশনের পার্কগুলো যেন মাদক সেবনে ব্যবহার না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার এসে এই বাংলাদেশে অতীতে অস্ত্র চোরাকারবারির যে রুট ছিল, সেটা বন্ধ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতে উলফা থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে যারা অস্ত্র সাপ্লাই দিতো, সেগুলো আমরা বন্ধ করেছি। তাদেরও যাতে শান্তি আসে ওই সেভেন সিস্টারে, সেই ব্যবস্থাও কিন্তু আওয়ামী লীগ করেছে। এটা সবচেয়ে বড় কাজ।
সরকার প্রধান আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ছিটমহলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে বিনিময় করে সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বিশাল সমুদ্র সীমা আমরা জয় করেছি। যারা আগে ক্ষমতা ছিল তারা (বিএনপি) তো এই ব্যাপারে কোওন উদ্যোগই নেয়নি। জানতোই না।
বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ক্ষমতায় এসেছিল লুটপাট, দুর্নীতি ও অস্ত্র চোরাকারবারি করতে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দেশ দুর্নীতিতে পাঁচ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে কাজেই ব্যস্ত ছিল তারা, আর মানুষ খুন করতে।
তিনি বলেন, এই দেশকে তারা কোথায় নিয়ে গিয়েছিল। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। অস্ত্র চোরাকারবারি, ওই তারেক রহমানতো অস্ত্র চোরাকারবাররি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। ওখানে বসে (লন্ডন) এখন নানাভাবে ওই অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ মারা, মানুষ খুন করা, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা-এসব কাজ করে বেড়ায়।
টানা গত তিন মেয়াদে তার সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে, সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাব। খবর: বাসস
Posted ৫:৩৫ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
desharthonity.com | Rina Sristy