মঙ্গলবার ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | প্রিন্ট

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির আহ্বান

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয় মুনাফা লাভের আশায়। একটি দীর্ঘ সময় সংগ্রাম করে, পরিশ্রম করে একটি প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে সুনাম অর্জন করতে হয়। আমরা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর একটি সু-পরিকল্পিত কাঠামো তৈরি করতে চাই বলে জানিয়েছেন স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ডিএসইর নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণ বা পদে পদে বাধাগ্রস্থ করার জন্য কাঠামো তৈরি করতে চাই না। তারা যাতে এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুন্দরভাবে টিকে থাকতে পারে, তার জন্য কাজ করতে চাই। এর আগের অনুষ্ঠানে ৪২টি কোম্পানির প্রতিনিধি এবং আজকে ৪৮টি কোম্পানির প্রতিনিধিকে নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। আমার এই সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে যে, আমরা যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আছি, বিভিন্ন সেল্ফ রেগুলেটর সংস্থা এবং যারা বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে আছেন তাদের মধ্যে একটি সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তারা একে পরিপূরক, সম্পূরক বা সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, কমিশন অনেক সময় মনে করে, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের আর্থিক প্রতিবেদন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় না বা অডিটরগণ যে রিপোর্ট তৈরি করেন তাতে অনেক কিছু গোপন থাকে। অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে যে রকম অবদান রাখে আমরাও চাই আমাদের পুঁজিবাজার সেরকম অবদান রাখুক এবং সে ধরনের অবস্থায় যাক। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা দেখি জিডিপিতে অবদান থাকলেও সেই ধরনের পর্যায়ে নেই। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাজারে যে কোম্পানিগুলো রয়েছে আমরা চাই তাদেরকে সে ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে চাই, যাতে যারা তালিকাভুক্ত হয়নি তারা যেন মনে করে এখানে যে সুযোগ সুবিধাগুলো রয়েছে তারা মিস করেছেন।

ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, এখানে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করের যে ব্যবধান রয়েছে শুধু সেটা নয় আরো যে সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। এখানে যেসব কোম্পানি রয়েছে তাদেরকে তিন মাসে, ছয় মাস এবং বছরে রিপোর্ট দিতে হয়। এতে করে আপনার যারা শেয়ারহোল্ডার রয়েছে তাদের প্রতি আপনারা বাস্তব তথ্য তুলে ধরেন। তাই এই ক্ষেত্রে অবশ্যই কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। সেটা কিভাবে বাড়ানো যায়। সে ব্যাপারেই আমরা কাজ করছি। যেসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা একটি উদাহরণ তৈরি করতে চাই যাতে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বুঝতে পারে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। শুধু ট্যাক্স সুবিধা নয়, এর বাহিরেও অনেক সুযোগ-সুবিধা তৈরি রয়েছে।

তিনি বলেন, আজকের সেমিনারের আলোচিত বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ডিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আর্থিক প্রতিবেদন সঠিকভাবে তৈরি ও প্রকাশের জন্য বিভিন্ন আইন-কানুন তৈরি করেছে। কোম্পানির সিএফও ও কোম্পানি সচিব এগুলো বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বশীল। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল ইস্যুতে স্বচ্ছতার অভাবে পুঁজিবাজার অনেক সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। আমরা আপনাদের আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিশেষ অতিথি বক্তব্যে ডিএসই’র পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমরা অনেক কিছু জানি কিন্তু বিষয়গুলো মাঝে মধ্যে আবার মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি স্পষ্টতার ঘাটতি থাকে সেক্ষেত্রে পরিচর্যা করে নেয়ার জন্য এ ধরনের প্রেগ্রামের প্রয়োজন। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং এর প্রয়োজন হয়। সকলের স্বার্থেই ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং সঠিকভাবে হওয়া প্রয়োজন। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং সময়মতো ও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। এটির উপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগ করেন। তাই সকলের স্বার্থ সংরক্ষনের জন্য আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতার কোন বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট এবং ডিসক্লোজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে মালিক, বিনিয়োগকারী এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য। কারণ এটার সাথে বড় একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। ফিনান্সিয়াল রিপোর্ট হচ্ছে মূলত চার্টার্ড একাউন্টদের যেটা নিরীক্ষক প্রতিবেদন থাকে এবং সেটার সঙ্গে কিছু সংযুক্ত তথ্য থাকে। এটার সঙ্গে বিস্তারিত তথ্য সহ একটি ফুল ডিসক্লোজ থাকবে। যেটার মাধ্যমে একেবারে সাধারণ যে মানুষও আর্থিক প্রতিবেদনটা বুঝতে পারবে সেভাবে প্রকাশ করতে হবে। এটা হচ্ছে ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং এর মূল কথা। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে এটা আরো বিস্তারিত প্রকাশ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ফুল ডিসক্লোজার থেকেও আরও বেশি তথ্য এবং এনালাইসিস সহকারে প্রকাশ করতে হয়। সেই সঙ্গে প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশনগুলো ডিসক্লোজারের একটি অংশ। তাই আর্থিক প্রতিবেদনগুলো সঠিক এবং বিস্তারিত তথ্য দিয়ে প্রকাশ করা দরকার।

অনুষ্ঠানের সমাপণী বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান সিপিএ বলেন, আজকে যে বিষয়টি নিয়ে সেমিনারে আলোচনা হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান এবং বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ আয়োজন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি আরও বলেন, একটি কোম্পানির আর্থিক অবস্থা তার আর্থিক প্রতিবেদনে জানা যায়। একটি সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন কোম্পানির অবস্থা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারে। কারণ আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যে কমপ্লায়েন্স, গভর্নেন্স, আর্থিক অবস্থার সঠিকতা সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারির এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই থাকে। একটি দক্ষ পুঁজিবাজারের অন্যতম শর্ত হলো তথ্যসমূহ পরিপূর্ণভাবে সময়মত প্রকাশ করা। দক্ষ পুঁজিবাজার করতে হলে আমাদের আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও সময়মতো প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। যা শেয়ারের মূল্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একটি দক্ষ ও টেকসই বাজার গঠনে সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা খুবই জরুরী। এজন্য ডিএসই ধাপে ধাপে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য এ ধরণের প্রোগ্রামের আয়োজন করবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২:৪৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

desharthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
গোলাম ফারুক
Contact

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।

Phone: 01759881611

E-mail: editor@desharthonity.com