নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস থাকলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়ান কেন? তিনি বলেন, কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়, আমাদের কী সেই হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেব? প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেল ৪টায় গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহ্বান জানাই, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করতে বলেছেন, কিন্তু দুর্নীতিবাজ পছন্দের লোক হলে আবার এগুলো নিয়ে কথা আসছে। কেন? আইন তো তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
তিনি আরও বলেন, বিবৃতি না দিয়ে তাদের ক্লায়েন্টের জন্য অভিজ্ঞ লোক পাঠাক। তারা কাগপত্র ঘেঁটে দেখুক, এটা আসলে কী? মামলা তো আমরা করিনি। এনবিআর থেকে আয়কর ফাঁকির মামলা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লেবাররা মামলা করেছেন।
নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন।
বিবৃতির ফলে আদালত প্রভাবিত হবে কি না, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না?- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারবে না কেন? আদালত স্বাধীনভাবে চলেব। ভয় পেলে চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি। তাহলে সরকারি বেতনভুক্ত একজন কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?
ব্রিকস সদস্যপদ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, চাইলে পাবো না, সে অবস্থা না। সব কাজেরই একটা নিয়ম থাকে। আমরা সেটা মেনে চলি। তারা আমাদের আগে থেকেই জানিয়েছেন, তারা ধাপে ধাপে নেবেন। পরে সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন। আমরা জোর দিয়েছি, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বিষয়ে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না, সে অবস্থায় নেই। আমরা এখন বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার অবস্থানে নিয়ে গেছি। তারাও জানেন, বাংলাদেশ এখন ভিক্ষা চাওয়ার মতো দেশ না। বিরোধীদের মধ্যে হা-হুতাশ আছে। তাদের সময়ে বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার মতো অবস্থায় ছিল, এখন নেই।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন- মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, আগামীতেও ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে, এটাই বিশ্বাস করি।
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে সরকারপ্রধান বলেন, এই দলটি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করে কিছু টাকা যাবে গুলশানে, কিছু যাবে হাওয়া ভবনে, বাকিটা যাবে লন্ডনে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে, দুর্নীতি করতে করতে এক সময় তারা বলবে আমরা পারব না। সেই দলকে জনগণ ভোট দেবে?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত উন্নয়নের পর জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যা কিছু করেছি, সব তো জনগণের কাজে লাগছে। সবই তো জনগণ ভোগ করছে। মেট্রোরেল করতে গিয়ে আমাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। সব জায়গায় কথা শুনতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন করে সবার প্রশংসা পাব, এটা আশা করিও না। আশা করাও ঠিক হবে না। যাদের এক সময় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা তো এখন সমালোচনা করবেই।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য আছি, ১৪ বছরের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি, সেটাও দেখতে হবে। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের দ্রুত একটি পরিবর্তন আনা সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করে রাখে। যখনই ক্ষমতায় আসি সেগুলো নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে গরীব মানুষ একটাও থাকবে না।
পাঁচ দেশের জোট ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান শেখ হাসিনা। জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে যোগ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা।
Posted ৭:০২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | Rina Sristy