নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) মোট ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে আমদানি-রফতানি পর্যায়ে শুল্ক হিসেবে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছর শেষে শুল্ক আহরণ দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার ৭৩২ কোটি টাকায়। লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি থেকে গেছে ১৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এনবিআরের শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পণ্য আমদানি-রফতানি পর্যায়ে গত বছর সবচেয়ে বেশি শুল্ক আহরণ হয়েছে হাই স্পিড ডিজেল থেকে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আদায় হয়েছিল ফার্নেস অয়েল থেকে।
হাই স্পিড ডিজেল ছাড়াও গত অর্থবছরে শুল্ক আহরণের দিক থেকে শীর্ষে থাকা অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে চিনি, ফার্নেস অয়েল, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড স্টিল শিট, কয়লা, বিটুমিন, কমলা ও আপেল। শীর্ষ ১০ পণ্য থেকে গত অর্থবছর এনবিআর শুল্ক আদায় করেছে ২৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এ তালিকার ১০ পণ্য থেকে আহরণ হয়েছিল ২৪ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।
বাণিজ্য খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ডলার সংকট, বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা ও এলসি খোলায় কড়াকড়ির মাধ্যমে আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে গত অর্থবছরে পণ্য আমদানি-রফতানি থেকে লক্ষ্যমাফিক শুল্ক আহরণ করা যায়নি। পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তারা।
২০২১-২২ অর্থবছরে এনবিআরের শুল্ক আহরণে ঘাটতি ছিল ৬ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছর তা আরো বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন সামনের দিনগুলোয়ও যদি শুল্ক আহরণে ঘাটতির হার সম্প্রসারিত হতে থাকে, তাহলে তা গোটা রাজস্ব ব্যবস্থায় চাপ বাড়াবে। একই সঙ্গে হয়ে উঠবে সরকারের ঋণনির্ভরতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এনবিআরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছর হাই স্পিড ডিজেল আমদানি হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৭৫২ টন। এতে শুল্ক আহরণ হয়েছে ৬ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা, এর আগের অর্থবছর হয়েছিল ৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এ পণ্যে শুল্ক আহরণ বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছর সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা শুল্ক আহরণকারী পণ্য ফার্নেস অয়েল থেকে এবার আয় হয়েছে ৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের মতো প্রধান জ্বালানি তেল থেকে সরকার আগে ১০ শতাংশ শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আয় করত। দেশে অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে চলতি অর্থবছর থেকে মোট ১৩ ধরনের জ্বালানি পণ্যে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা সুনির্দিষ্ট শুল্ক বেঁধে দেয়া হয়েছে।
দেশে সরকারি পর্যায়ে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলসহ অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি করে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এর বাইরে বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানিও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পণ্য আমদানির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে (সংশোধিত হিসাব) ৭৯৯ কোটি ৩১ লাখ ডলারের জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল এসেছে ৯৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের এবং পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে ৭০৫ কোটি ৭২ লাখ ডলারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জ্বালানি পণ্য আমদানিতে ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি ২৮ লাখ ডলারে। এর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের। পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৫১৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারের। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি কমেছে ২৭ শতাংশ।
Posted ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩
desharthonity.com | munny akter